প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা কিশোরগঞ্জের নিকলী বেড়িবাঁধ হাওর পর্যটন এলাকায় ছুটির দিনে পর্যটনপ্রেমীদের ঢল নেমেছে। সাগরের মতো থই থই জলরাশির অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগে চলছে হাজারো পর্যটকের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। শুক্রবার (১ জুলাই) দুপুরে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত বেড়িবাঁধ পর্যটন এলাকা।

এমন পরিস্থিতিতে বেশ খুশি পর্যটন শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও জীবিকা নির্বাহকারী লোকজন।

গত ২০০০ সালের দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা নিকলীর সদরকে বর্ষার প্রচণ্ড ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষায় সরকার পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ তৈরি করে। একই সময় ভাঙনপ্রবণ উপজেলার ছাতিরচর গ্রাম রক্ষায় রোপণ করা হয় হাজারো করচগাছ।

দৃষ্টিনন্দন এবং দীর্ঘ এ বেড়িবাঁধ ভাসমান পানিসহিষ্ণু করচবন এবং সাগরের ন্যায় বর্ষার দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি ‌‌সি-বিচের মতো রূপ ধারণ করে।

আর এ কারণেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা দল বেঁধে শত শত মোটরবাইক, প্রাইভেট কার, মাইক্রো ও বাস হাঁকিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্ষার এ মৌসুমে ছুটে আসেন এ পর্যটন এলাকায়।

এসব পর্যটক টায়ার-টিউব নিয়ে জলকেলি, নৌকা ও স্পিডবোটে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশিতে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বিস্তীর্ণ হাওরের বুকে ভাসমান করচবনের শীতল ছায়ায় প্রিয়জনদের নিয়ে মেতে ওঠেন ভিন্ন রকম আনন্দে।

কোনো কোনো পর্যটক দল নৌকায় ঘুরে ঘুরে হাওর জলরাশির অপার সৌন্দর্য এবং স্রোতের গর্জন আর পানির ছলাৎ ছলাৎ ধ্বনি উপভোগ করে রাত পর্যন্ত গুজরান করতেন এ হাওর পর্যটন এলাকায়।

পর্যটক নিয়ে হাওরে ঘুরতে আসা ট্রলারের মালিক খাইরুল আলম বাদল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তো বর্ষার সময় পর্যটক আসার অপেক্ষায় নৌকাগুলো সাজিয়ে থাকি। অনেক মানুষ নতুন করে নৌকা ও ট্রলার তৈরি করে টাকা খরচ করে। এ মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকরা আসেন। বর্তমানে নিকলী হাওরে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। শুক্রবার (১ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত বেশ পর্যটক এসেছেন এখানে।

নিকলী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ বলেন, এখন পর্যটনের মৌসুম। ধীরে ধীরে নিকলী হাওর পর্যটন এলাকায় পর্যটক আসতে শুরু করেছে। কিন্তু বন্যার কারণে পরিস্থিতি অন্যরকম। তাই হয়তো পর্যটক এখনো তেমনভাবে আসতে শুরু করেনি। তবে আমি আশাবাদি দ্রুত সময়ের মধ্যেই পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠবে এ পর্যটন এলাকা।

নিকলী উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা মো. আবু হাসান ঢাকা পোস্টকে জানান, নিকলী হাওরের পর্যটন শিল্পের বিকাশে করণীয় নির্ধারণে একটি মিটিং করেছিলাম এ গত মাসের ৯ তারিখ। আমরা নৌকাগুলোকে রেজিট্রেশনের আওতায় নিয়ে এসেছি যাতে নৌকাগুলো পর্যটকদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে না পারে। 

হোটেলগুলোও যাতে পর্যটকদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া না নিতে পারে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবারে ছুটির দিন থাকায় বেশি পর্যটক আসেন তাই গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা হয়। সেই সমস্যা সমাধানে পুলিশসহ একটি টিম কাজ করব। এ ছাড়া পর্যটকটের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম কাজ করছে।

এসকে রাসেল/আরআই