কুড়িগ্রামে দ্বিতীয় দফায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। প্রথম দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা। 

অন্যদিকে পর পর দুই দফা বন্যার কবলে পড়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। এছাড়াও নদী ভাঙনের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। ভাটিতে পানি কম থাকায় নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গত কয়েক দিনে জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর ভাঙনে বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। 

শুক্রবার (১ জুলাই) বিকেলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেও এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুধু ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রাতে ধরলার পানিও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  

সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকার সুরেশ চন্দ্র বলেন, নদীতে পানি বেশি থাকায় এতদিন বাড়িতে পানি ছিল। নদী ভাঙন ছিল না। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে আমার এখানকার অনেক বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। ঘরের জিনিসপত্র যে সরাব তারও সময় পাচ্ছি না।

একই এলাকার মালতী রাণী বলেন, ‘হামার বাড়ি নদীর পেটোত গেইছি। নিজের জায়গা জমিন (জমি) নাই এলা কোনডাই যাই। খাওয়া খাদ্যও নাই, ছোয়াগুলাক (ছেলেমেয়েকে) এলা কী খাওয়াই। ভাত-তরকারি যে পাক করমো তারও ব্যবস্থা নাই। খুব একটা কষ্টোত পড়ছি। এলা যে কোনডাই যামো, কী করমো জানি না।’

স্থানীয় ঘোগাদহ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তহিদুল ইসলাম দুলু বলেন, আমার ওর্য়াডের দুই দিকে পানি। পানি কমায় দুধকুমার নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনে মাঝিপাড়া গ্রামের ১৫টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।  

সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নেই ধরলার অববাহিকায় অন্তত ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ দ্বিতীয় দফায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সদরের পাঁচগাছী ও হলোখানা ইউনিয়নসহ ধরলা ও দুধকুমারের অববাহিকার ইউনিয়নগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকায় অন্তত ২০ হাজার মানুষ নতুন করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন।

জেলা প্রশাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধির ফলে কি পরিমাণ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তা নিরুপণের কাজ চলছে। 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানে ভারী বৃষ্টির ফলে কুড়িগ্রামে ধরলা ও দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। ভাটিতে পানি কম থাকায় নদ-নদীর পানি হ্রাস পেতে শুরু করেছে।

জুয়েল রানা/আরএআর