গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা লতিফ শেখ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দা নারী নেত্রী লিলি বেগম নিখোঁজের ঘটনায় হওয়া মামলার ১ নং আসামি যুবলীগ নেতা লতিফ শেখ (৪৮) ও তার স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুরের একটি দল।

বুধবার (২৯ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সালাউদ্দিন দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেন। 

পরদিন বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) তাদেরকে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ১ দিনের রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে রাজবাড়ীর কারাগারে পাঠানো হয়। তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে রিমান্ডে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে কিছু জানাতে চাননি এই কর্মকর্তা।  

এ মামলার ৩ নং আসামি লতিফ শেখের ছেলে রবিউল শেখ (২৪)। আসামিরা দৌলতদিয়া শামসু মাস্টার পাড়ার বাসিন্দা। লতিফ শেখ দৌলতদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি।

নিখোঁজ লিলি বেগম

নিখোঁজ লিলি বেগম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাড়িয়ালী এবং যৌনকর্মী। যৌনকর্মীদের সন্তানদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত বেসরকারি সংগঠন মুক্তি মহিলা সমিতির কার্য্য নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন লিলি বেগম। 

লিলি বেগম নিখোঁজের ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন লিলি বেগমের মেয়ের জামাই মুরাদ হোসেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আসামি লতিফ শেখ দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর অভ্যন্তরে অবস্থিত লিলি বেগমের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ও অবস্থান করতেন। নিবিড় ঘনিষ্টতার কারণে লতিফ স্থানীয়ভাবে লিলি বেগমের স্বামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত বছরের ১০ নভেম্বর দুপুরে লিলি বেগমকে তার কথিত স্বামী লতিফ শেখ দাওয়াত খাওয়ানোর কথা বলে শামসু মাস্টর পাড়ায় তার নিজ বাড়িতে ডেকে নেন।

ওইদিন বিকেলে লিলি বেগমের আত্মীয় স্বজনরা তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ-খবর নিয়েও এখন পর্যন্ত কোথায়ও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে তাকে উদ্ধারের দাবিতে মুক্তি মহিলা সমিতি, লিলির আত্মীয়-স্বজন ও পল্লীবাসীরা মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। এদিকে দীর্ঘ সময়েও গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ মামলাটির অগ্রগতি করতে না পারলে সেটি ফরিদপুর পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত।

এ বিষয়ে মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম বলেন, লিলি বেগম আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন সহকর্মী। পল্লীর অসহায় নারী ও শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তার হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত, আতঙ্কিত। তবে দীর্ঘদিন পর হলেও এ ঘটনার প্রধান দুই আসামিকে পিবিআই গ্রেপ্তার করেছে। আশা করি লিলি বেগমকে পুলিশ উদ্ধার করতে সক্ষম হবে এবং অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালাউদ্দিন দুইজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করার সময় এখনো হয়নি।

মীর সামসুজ্জামান/আরআই