বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে জয়পুরহাটের নতুন হাটে এক জোড়া উন্নত জাতের দেশি গরু এনেছিলেন আব্দুল আজিজ। তিনি গরু দুটির দাম ছয় লাখ টাকা হাঁকিয়েছেন। ক্রেতারা তার গরুর দাম ৫ লাখের বেশি বলেননি। এতে কাঙিক্ষত দাম না পেয়ে তিনি গরু দুটি ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।

একইভাবে গরুর কাঙিক্ষত দাম না পেয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা এনামুলও তার একটি গরু ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, গরুর দাম এক লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছি। কিন্তু ক্রেতারা এক লাখ ২০ হাজার বলে। এই দামে গরু বিক্রি করলে লোকসান হবে।

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জয়পুরহাটের নতুন হাটে এবার প্রচুর গরু উঠেছে। ক্রেতার আনাগোনাও বেশি। তবে বিক্রেতাদের কাছে গরুর দাম কাঙিক্ষত নয়। এতে গরু বিক্রি না করে বিক্রেতারা হাট থেকে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।

শনিবার (২ জুলাই) দুপুরে নতুন হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। ভারতীয় বোল্ডার গরুও আছে অনেক। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতাও এসেছেন গরু কিনতে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে গরুর দর-কষাকষি চলছে। দামে মিললে ক্রেতারা কিনছেন, না মিললে চলে যাচ্ছেন। এদিকে হাটে প্রচণ্ড রোদ থাকায় অনেকে ক্লান্ত হয়ে হাটে থাকা গাছের নিচে বসে পড়েছেন।

হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা ও হাট ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার মধ্যে বড় পশুর হাট এই নতুন হাট। এই হাট জেলা শহরেই বসে। এই হাটে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপরীরা আসেন। তবে ঈদের আগে ব্যাপারীরা এই হাট থেকে গরু কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরে নিয়ে যান। কিন্তু এবার বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেটের ব্যাপারীরা আসেননি। অন্য অঞ্চল থেকে ক্রেতারা আসলেও গরুতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত দাম।

গরুর ব্যাপারী বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ধলু মিঞা বলেন, হাটে পাঁচটি উন্নত জাতের গরু বিক্রি করতে এনেছি। দাম ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত হাঁকিয়েছি। তার মধ্যে একটি মাত্র গরু ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন সেই দামে গরু বিক্রি করলে গরু প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে। তাই বাধ্য হয়ে অন্য চারটি গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছি।

নোয়াখালী থেকে এই হাটে গরু কিনতে এসেছেন ওয়াসিম ব্যাপারী। তিনি বলেন, আমি এই হাটে ৩২ থেকে ৩৫টি গরু কেনার টার্গেট নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই টার্গেট পূরণ নাও হতে পারে। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ১৫টি গরু কিনেছি। সর্বনিম্ন ৮০ হাজার টাকায় এবং সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় ১৫টি গরু কিনেছি।

ফেনী থেকে এসেছেন ব্যাপারী আব্দুস সাত্তার। তার প্রতিনিধি সাইদুর রহমান বলেন, আমরা ৬০টি গরু কেনার লক্ষ্য নিয়ে এসেছি। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৫০টি গরু কিনেছি। যে দামে গরু কেনার আশা করা হয়েছিল। সেই দামের চেয়ে দুই-তিন হাজার টাকা বেশিতে এসব গরু কেনা হয়েছে।

হাটের ইজারাদার কালীচরণ আগরওয়ালা বলেন, হাটে প্রচুর গরুর আমদানি হয়েছে। কিন্তু বিক্রি কম। কোরবানির পশুর হাট সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য হাটে পুলিশ, র‌্যাব সদস্যরা রয়েছেন। তাছাড়া জাল টাকা শনাক্তের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে কয়েকটি ব্যাংকের অফিসাররা এসেছেন। হাট সিসি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। হাটে কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা অসুস্থ হলে তাদের জন্য একজন চিকিৎসক আছে। গরুর জন্য ভেটেরিনারি ডাক্তার আছে।

চম্পক কুমার/আরএআর