মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ছিল দেশের অন্যতম ব্যস্ত ফেরিঘাট। এ ঘাট দিয়েই যাতায়াত করতেন দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ ঘাটে লোকজন নেই বললেই চলে। ঘাট থেকে ছাড়ছে না কোনো ফেরি। ফলে অলস সময় পার করছেন ফেরির চালক ও কর্মচারীরা। 

সরেজমিনে ৩ নং ফেরি ঘাট এলাকায় দেখা যায়, ঘাটে ভেড়ানো রয়েছে ফেরি কুঞ্জলতা ও ক্যামেলিয়া। এর পাশেই রয়েছে আরও দুটি ফেরি কুমিল্লা ও ফরিদপুর। গত ২৭ জুন সর্বশেষ মোটরসাইকেল নিয়ে ঘাট থেকে ছেড়ে যায় ফেরি কুঞ্জলতা। কিন্তু নদীর মাঝে ডুবোচর আটকা থাকায় ফেরিটিকে ওপারে যেতে পড়তে হয় বিপাকে। এরপর ঘাট থেকে আর কোনো ফেরি ছেড়ে যায়নি। ফেরি কুঞ্জলতা ও ক্যামেলিয়ার ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, গল্প করে অলস সময় পার করছেন চালকরা।  

ফেরি কুঞ্জলতার চালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সাড়ে ৪ বছর ধরে এই ঘাটে ফেরি চালাই। মানুষের সেবা করার চেষ্টা করছি। করোনার সময় সব ধরনের যানবাহন বন্ধ ছিল। শুধু ফেরি চালু ছিল। তখন মানুষ হুমড়ি খেয়ে ফেরিতে উঠত। হাজার হাজার মানুষ হুড়োহুড়ি করে ফেরিতে উঠতে গিয়ে জুতা স্যান্ডেল রেখে চলে গেছে। সে সময় মানুষের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, তাদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সেই স্মৃতি আজ তাড়া করে। মানুষের বিপদে কিছু করতে পেরেছিলাম ভেবে ভালো লাগে। 

তিনি আরও বলেন, গত ২৫ তারিখ থেকে নিয়মিত ফেরি চলছে না। সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ২৭ তারিখে সেতুর উত্তর প্রান্তে মোটরসাইকেলের জটলা লাগে। সেদিন সর্বশেষ মোটরসাইকেল নিয়ে ঘাট থেকে ফেরি কুঞ্জলতা নিয়ে ওপারে যাই। কিন্তু নদীতে ডুবোচরের সৃষ্টি হওয়ায় যেতে অনেক সমস্যা হয়েছে। ড্রেজিং চলছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, আবার ফেরি চলবে। সেই আশায় বসে আছি।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে ঘাটে কোনো গাড়ি আসেনি। মোটরসাইকেল আসছিল। মাঝে-মধ্যে  এখনো মোমটরসাইকেল আসে। তাদের বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেই।

তিনি বলেন, যখন পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লেগেছিল, তারপর থেকে আমরা খুব সতর্কভাবে ফেরি চালাইতাম। ব্রিজের নিচ দিয়ে আসার সময় মনে হতো, ব্রিজের গোড়ায় বাঘ দাঁড়িয়ে আছে। খুব সতর্কতার সঙ্গে ফেরি চালাইতাম।

ফেরি কুমিল্লার ক্যান্টিনম্যান মো. হান্নান বলেন, মানুষের সঙ্গে ছিল আমাদের সারাক্ষণের সংসার। এখন মানুষ নেই। সব শূন্য মনে হয়। বিষণ্ন লাগে, স্টাফদের সঙ্গে গল্প করে মানুষের সখ্যতা ভোলার চেষ্টা করি। কিন্তু সেই স্মৃতিতো ভোলা যাই না।

ফেরি কুঞ্জলতার সুকানি সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্যার যেভাবে বলত, আমি সেভাবেই ফেরি চালাইছি। ফেরিতে চলা মানুষগুলোকে খুব মিস করছি।

শিমুলিয়া ফেরিঘাটের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা নূর মোহাম্মদ বলেন, এখন তো ফেরি চলে না। টিকিট কাটতে হয় না। তারপরও ওপরের নির্দেশ, আমাদের থাকতে হবে। আমরা আছি। যেহেতু সেতু দিয়ে এখন মোটরসাইকেল চলে না, ঈদের সময় নির্দেশ আসতে পারে ফেরি দিয়ে মোটরসাইকেল পার করতে হবে।

ফেরি ক্যামেলিয়ার গিজার বোরহানউদ্দিন বলেন, ঈদের কারণে আমাদের এখানে রাখছে। তানাহলে আমাদের অন্য কোথাও দিয়ে দিত। যখন পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লেগেছিল, তারপর থেকে সেতুর নিচ দিয়ে ভয়ে ভয়ে ফেরি চালাতাম। যখন ঝড় হতো, ইঞ্জিন চালিয়ে নদীতে ফেরি থামিয়ে রাখতাম।

গিজার মোহাম্মদ আলী বলেন, ইঞ্জিন চালানোই আমাদের কাজ। পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরি ধাক্কা লাগার পর সেতুর গোড়ায় আসলে ইঞ্জিন বারাইয়া চালাইতাম। যাতে স্রোতের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোথাও ধাক্কা না লাগে।

শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক বাণিজ্য ফয়সাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সর্বশেষ ২৭ তারিখে ঘাট থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে একটি ফেরি ছেড়ে গিয়েছিল। তারপর আর কোনো ফেরি যায়নি। নদীতে ড্রেজিং চলছে। ঈদের মধ্যে মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরি চলাচল করতে পারে। ঘাটে এখন ছয়টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে চারটি সচল রয়েছে।

ব.ম শামীম/এসপি