ঝালকাঠির নলছিটিতে ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে নলছিটি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বিজন কৃষ্ণ খরাতির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে ঘর বানানোয় সেগুলো বসবাসের অনুপযোগী বলে অভিযোগ করেন উপকারভোগীরা।

মগড় ইউনিয়নের দক্ষিণ মগড় গ্রামের মৃত লিয়াকত আলি মাঝির স্ত্রী নাজমিন ও দপদপিয়া ইউনিয়নের ভরতকাঠি গ্রামের শহিদের কাগজপত্র সম্পন্ন করে তাদের নাম পাঠিয়েছিলেন প্রকল্প কর্মকর্তা বিজন কৃষ্ণ খরাতি। তালিকায় নাম থাকলেও ঘর পাননি বলে জানান ভুক্তভোগী দুই উপকারভোগী।

অসহায় নাজমিন আক্ষেপ করে বলেন, আমার স্বামী নেই, বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাই। আমাকে একটি ঘর করে দিবে। এ জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা টাকাও নিয়েছে। কিন্তু আমারে ঘর দিল না। শুধু কয়েক পিস টিন দিছে আমারে।

এই প্রতিবেদককে তার বেড়াবিহীন ঝুপড়িটি দেখিয়ে তিনি বলেন, তিন সন্তান নিয়ে এই ঝুপড়িতে থাকি। বৃষ্টিতে ভিজি। আমার নামে ঘর আইল। অথচ আমি পেলাম শুধু কয়পিস টিন।

ভরতকাঠি গ্রামের শহিদ জানান, তাকে ঘর দেওয়া হয়নি। প্রকল্প কর্মকর্তা তাকে বলেছে, পরবর্তীতে ঘর এলে তাকে ঘর দেওয়া হবে। শহীদ আক্ষেপ করে বলেন, ঘরের তালিকায় আমার নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে, তাহলে আমার ঘর বা ঘরের টাকা কোথায় গেল?

উপজেলা পিআইও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে 'জমি আছে ঘর নেই' প্রকল্পে নলছিটি উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের জন্য ৩৪টি ঘর নির্মাণের অনুমোদন প্রদান করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রতিটি ঘরের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু পিআইও বিজন কৃষ্ণ ৩৪টি ঘরের মধ্যে ৭টি ঘরের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া বাকি ২৭টি ঘর তৈরি করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। যা এখন বসবাসের অনুপযোগী বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের পাওতা গ্রামের পারুল, তৌকাঠি গ্রামের গোলাম হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আকলিমা, বারাইকরন গ্রামের নজরুল ইসলাম মাঝি ও কাপরকাঠি গ্রামের আনোয়ার ফকিরের নামে ঘর বরাদ্দ হলেও আদৌ তারা কোনো ঘর পাননি।

পিআইও বিজন কৃষ্ণ খরাতি

কাপড়কাঠি গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আনোয়ার ফকির জানান, তার নামে যে ঘর বরাদ্দ হয়েছে, তা তিনি জানেন না। কোনো জনপ্রতিনিধিও তাকে কিছু বলেননি কখনো।

বারাইকরন গ্রামের বাসিন্দা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম মাঝি বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আমার নামে 'জমি আছে ঘর নাই' প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু আমাকে ঘর দেওয়া হয়নি। তাহলে আমার নামে বরাদ্দের ঘরটি কোথায় গেল?

মগড় ইউনিয়নের খাওক্ষীর গ্রামের মেরি বেগম বলেন, অনেক কষ্টের পর অসহায় হিসেবে প্রকল্পের তালিকায় আমার নাম ওঠে। কিন্তু আমি ঘর পাচ্ছিলাম না। পরে দুই সাংবাদিকের সহযোগিতায় কিছুদিন আগে ঘর দিলেও তা বসবাসের অনুপযোগী। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘরটি তৈরি করায় ভয়ে ঘরে থাকতে পারিনি।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প কর্মকর্তা বিজন কৃষ্ণ খরাতি বলেন, সব ঘরের বিল পরিশোধ করা হয়নি। প্রতিটি ঘর বাবদ ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা পরে দেওয়া হবে।

পরিদর্শন না করে, কাজ না দেখে কীভাবে ৪০ হাজার টাকা করে দিলেন এবং বরাদ্দের পুরো টাকা না দিয়ে নগদ কেন ৪০ হাজার টাকা দিলেন, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। বরাদ্দ করা ঘরের বাকি টাকা কোথায় গেল, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোথায় ও কীভাবে টাকা ফেরত দেবেন, এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি কলটি কেটে দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা সিকদার জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঝালকাঠি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল হক বলেন, এ বিষয় আমার জানা ছিল না। এখন আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। অবশ্যই আমি তদন্ত করে দেখব।

এনএ