রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় স্বামী ও সৎ ছেলের নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেলানী বেগম (৩৫) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী মারা গেছেন। শনিবার (২ জুলাই) দিবাগত রাতে বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের নরদাশ পূর্বপাড়া এলাকার স্বামীর বাড়িতেই তিনি মারা যান। 

তার স্বামী আমজাদ হোসেন (৫৩) ওই এলাকার বাসিন্দা। পেশায় কেচ্ছাশিল্পী তিনি।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার ( ২৮ জুন) ছেলে ও পুত্রবধূকে নিয়ে ফেলানী বেগমের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান আমজাদ হোসেন। পরে চিকিৎসা না করিয়ে ঘরে আটকে রেখে নিরুদ্দেশ হন তিনি।

টানা তিন দিন ফেলানী বেগমকে বাড়ির বাইরে দেখতে না পেয়ে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। শুক্রবার (১ জুলাই) বিকেলে তালাবদ্ধ ঘরে পাওয়া যায় ফেলানী বেগমকে। পরে দরজা ভেঙে প্রতিবেশীরা মুমূর্ষু অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করেন।

গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে তার চিকিৎসা করান প্রতিবেশীরা। এর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার দিবাগত রাতে মারা যান ফেলানী বেগম। স্ত্রীর মৃত্যুর খবরে বাড়ি ফিরলে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

এই ঘটনায় রোববার (৩ জুলাই) দুপুরের দিকে বাগমারা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত ফেলানী বেগমের বোন কোহিনূর বেগম। এই মামলায় স্বামী আমজাদ হোসেন, ছেলে সোহেল রানা ও পুত্রবধূকে আসামি করা হয়েছে। আমজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে এখনো লাপাত্তা তার ছেলে ও পুত্রবধূ।

জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে উপজেলার পাঁশুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ফেলানী বেগমের সঙ্গে কেচ্ছাশিল্পী আমজাদ হোসেনের বিয়ে হয়। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে।

স্বামী ও সতিনের ছেলে-পুত্রবধূর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ লেগেই ছিল ফেলানী বেগমের। এরই জেরে মঙ্গলবার তার ওপর নির্যাতন চলে। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে বাড়ি থেকে তারা পালিয়ে যান।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাগমারা থানার উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রোববার দুপুরের দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, এই ঘটনায় তিন জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এই মামলার প্রধান আসামি আমজাদ হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছেন। রোববার দুপুরের দিকে তাকেও আদালতে নেওয়া হয়েছে। মামলার অপর দুই আসামি পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরআই