বিশাল আকৃতির কালো রঙের ‘রাজা’ আর ‘বাদশা’ থাকে আলাদা ঘরে। দেখতে বেশ নাদুস-নুদুস, শুধু বয়স আর ওজনে একটু কম-বেশি। তবে আচরণে বেশ মিল। মালিকের ডাকে দুজনে সায় দিলেও অন্যের ডাকে করে ওঠে ফোঁস। কোরবানি উপলক্ষে রাজা-বাদশাকে প্রস্তুত করেছেন পান ব্যবসায়ী শাহিনুর ইসলাম।

‘রাজা’ ফ্রিজিয়ান জাতের। বয়স চার বছর। বয়সে দুই মাসের ছোট ‘বাদশা’ শাহিওয়াল জাতের। স্থানীয়দের মধ্যে রাজা-বাদশা সাড়াও ফেলেছে। গরু দুটি কেউ কিনতে আবার কেউ দেখতে ভিড় করছেন। খামারি দুটি গরুর দাম হাঁকিয়েছেন একেবারে সস্তায়, মাত্র ১৪ লাখ টাকা।

প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময়ে বাড়ি থেকে গরু বিক্রি করে আসছেন ওই খামারি। তাই এবারও হাটে না তুলে বাড়ি থেকেই রাজা-বাদশাকে হাতবদল করতে চান ক্ষুদ্র এই উদ্যোক্তা। তার দাবি, দুই গরুর মধ্যে রাজার ওজন হবে ৩৫ মণের বেশি। এর দাম হাঁকছেন সাড়ে ৭ লাখ। আর বাদশার দাম সাড়ে ৬ লাখ টাকা, এটির ওজন ৩০ মণ।

ক্ষুদ্র খামারি শাহিনুর ইসলামের বাড়ি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌর এলাকার সর্দারপাড়া ফাতাংটারী গ্রামে। তিনি সাত বছর আগে ছোট পরিসরে বাড়িতে খামার গড়ে তুলেছেন। পানের ব্যবসার পাশাপাশি এই খামার থেকে প্রতিবছর দুই তিনটি করে গরু বিক্রি করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দুই বছর আগে কেনা রাজা ও বাদশাকে লালন-পালন করেছেন। খামারে গরুর পরিচর্যা ও দেখাশোনা করেন তার মা নুর নাহার বেগম, ছোট ভাই শামীম ও নাদিম।

রোববার (৩ জুলাই) সকালে হারাগাছে শাহিনের বাড়িতে গেলে টিনশেড আলাদা দুটি ঘরে দেখা মেলে রাজা-বাদশার। নিরিবিলি পরিবেশ আর আলাদা চালাঘরে আছে আলো-বাতাসের সুব্যবস্থা। রাজা-বাদশাদের মতোই গরু দুটির ভাবসাব। দেখতেও বেশ আকর্ষণীয়। বিশাল দেহের অধিকারী রাজা-বাদশাকে সামাল দেওয়া মুশকিল হয় শাহিনের পক্ষে।

রাজা-বাদশাকে প্রতিদিন কাঁচা ঘাস, খড়, গমের ভুসি, ধানের কুঁড়া, ভুট্টা ও খুদের ভাত খাওয়ানো হয়। বর্তমানে গোখাদ্যের দাম বাড়ায় শাহিনের খরচটা একটু বেশি হচ্ছে। তবে ঈদ ঘিরে আলাদা কোনো ওষুধ, কীটনাশক তিনি ব্যবহার করেন না। একেবারেই দেশি গরুর মতো খাবার খাওয়ানো হচ্ছে রাজা-বাদশাকে।

খামারি শাহিনুর ইসলাম জানান, ফ্রিজিয়ান জাতের রাজার ওজন ১ হাজার ৪০০ কেজির বেশি হবে। দুই বছর আগে গরুটি কিনেছেন, এখন বয়স চার বছর। বাদশার বয়স ৩ বছর ১০ মাস, এটি শাহিওয়াল। ওজন রাজার চেয়ে পাঁচ মণ কম। এ কারণে রাজার চেয়ে এর দাম এক লাখ কম চাইছেন।

দাম কম কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুইটা গরু ১৪ লাখ টাকা দাম চাইছি। কিছু কম হলেও বিক্রি করে দেব। স্থানীয় পাইকারদের অনেকেই রাজা-বাদশাকে দেখেছে। কিন্তু দামদরে মেলেনি। সামান্য লাভ হলেই আমি বিক্রি করব ইনশাআল্লাহ। আমি বেশি দাম ধরে রাখি না। সস্তায় বিক্রি করি সব সময়। নিজের ঘরের খাবার খাওয়াই। গত বছর এর চেয়ে ছোট তিনটি গরু ১১ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। সেই তুলনায় এবার গরুর দাম কম রয়েছে।

এদিকে শাহিনুর ইসলামের রাজা-বাদশার মতো রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সারা ফেলছে ফ্রিজিয়ান জাতের ভদ্র বাবু ও দুষ্টু বাবু। এ গরু দুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া রংপুর নগরীর রামপুরা এলাকার খামারি রহমত আলী ব্লাক লায়নের দাম হাঁকিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। ‘ব্লাক লায়ন’ ৩৩ মণ ওজনের। আলোচনায় পিছিয়ে নেই কাউনিয়ার সুলতান। ৩৭ মণ ওজনের ফ্রিজিয়ান জাতের সুলতানের দাম চেয়েছেন মালিক ১২ লাখ টাকা।

রংপুরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনলাইনে ১১টি পশুর হাট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। ‘পশুরহাট’ নামে অনলাইন পেজ খুলে এই হাট চালু করা হয়েছে। এই অনলাইন পেজে গরু পালনকারীদের পশুর ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য থাকবে। আশা করা হচ্ছে, বিগত বছরগুলোর মতো এবারো এই অনলাইন গরুর হাটে সাড়া পাওয়া যাবে।

অনলাইনে পশু কেনাবেচার হাট ছাড়া রংপুর জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত অর্ধশত পশুর হাট রয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে বড় চারটি হাট। বাকি সব হাট বিভিন্ন উপজেলায়। তবে এখন পর্যন্ত কোরবানির পশুর হাটগুলোতে কেনাবেচা জমে ওঠেনি।

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ট্রেনিং অফিসার বাবুল হোসেন জানান, জেলায় এবার কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭০০ পশু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। আর চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৩০০টি পশুর। এবার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পশুর হাটে রোগ নির্ণয়ে পশু চিকিৎসকের টিম থাকবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ