পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর শিমুলিয়া ঘাট থেকে কাঁঠালবাড়ি ও মাঝিকান্দি ঘাটে ছেড়ে যায়নি একটি লঞ্চও। ঘাট পারাপারের জন্য আসেনি কোনো যাত্রীও। ফলে উপার্জন বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন লঞ্চ মালিক ও কর্মচারীরা। শুধু তাই নয়, এখন ঘাটে লঞ্চ পাহারা দিতে গিয়ে বাড়তি ব্যয় বহন করতে হচ্ছে মালিকদের।

সরেজমিনে ঘাটে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে বাঁধা রয়েছে ২৫-৩০টি লঞ্চ। এগুলোর মধ্যে জয়েন্ট ওয়াটার ওয়েজ, এমএমএল রাকিব, এএসকে শিপিং লাইন, এমএস শিপিং লাইন্স, আব্দুল জলিল শিপিং লাইন্স, মেসার্স বিক্রমপুর এন্টারপ্রাইজ, বিএস নেভিগেশন কোম্পানি, খান শিপিং লাইন্স, হুমায়ুন কবির লিভার সার্ভিস, তরিকুল ইসলাম নেভিগেশন কোম্পানি, মেসার্স এসবি শিপিং লাইন্স, রিয়াদ এন্টারপ্রাইজ, ব্রাদার্স নেভিগেশনসহ আরও অনেক লঞ্চ রয়েছে। 

ইতোমধ্যে বেশ কিছু লঞ্চের চালক ও স্টাফ চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। আবার অনেক লঞ্চের চালক ও স্টাফদের মালিকরা চাকরি থেকে অব্যাহতি না দেওয়ায় তারা রয়ে গেছেন।

যে ঘাটে সব সময় মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকত সেই ঘাটটিতে এখন সুনসান নীরবতা। ঘাটে সারিবদ্ধভাবে রাখা লঞ্চগুলোতে কতিপয় স্টাফ ছাড়া অন্য কাউকে দেখা যায়নি। কিছু স্টাফ লঞ্চ পাহারা দিচ্ছেন আর পাশে বসে তাস খেলছেন। 

লঞ্চচালক মোহাম্মদ আকরাম হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঘাট থেকে একটি লঞ্চও ছেড়ে যায়নি। একটা লঞ্চ চালাইতে ৬-৭ জন লোক লাগে। তারা সবাই এখন বেকার। ঘাট থেকে ৮৭টি লঞ্চ চলাচল করত। ২৪ তারিখ থেকে সব লঞ্চ বন্ধ রয়েছে।

লঞ্চের মাস্টার আবু কালাম বলেন, ২৪ তারিখ থেকে কোনো ট্রিপ নাই। আগে প্রতিদিন তিনটা থেকে চারটা ট্রিপ মারতাম।

এম এল রাজিব এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনচালক মো. শামসুদ্দুহা বলেন, ৩০ বছর ধরে লঞ্চ চালাই। এ রকম অবস্থা আগে সৃষ্টি হয়নি। মালিকরা যদি ছেড়ে দেয় তাহলে অন্য নৌপথে গিয়ে লঞ্চ চালাব।

ফারজানা ৫ এর মাস্টার আতিয়ার চৌধুরী বলেন, লঞ্চ বন্ধ। মালিকের কাছে বেতন চাইতে লজ্জা লাগছে। না চাইলে তো সংসার চলবে না।

লঞ্চঘাটে থাকা বেশ কিছু স্টাফ বলেন, আগে লঞ্চ চালাইতাম। এখন আমরা শুধু পাহারা দেই। এটাই আমাদের বর্তমান দায়িত্ব।

এমএল লিপু খান লঞ্চের মাস্টার লালন বলেন, লঞ্চ চলে না। বসে বসে বেতন নিতে ইচ্ছা করছিল না। তাই গত ২৭ জুন চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।

এমবি বাহরাইন লঞ্চের মালিক সাদিকুর রহমান বলেন, আমার লঞ্চটি ৮২ ফুট লম্বা। ২৪ তারিখের পর থেকে লঞ্চ ঘাটে বসা। এখন নিজেই লঞ্চ পাহারা দিতেছি। আমার লঞ্চটি যখন এই শিমুলিয়া ঘাট থেকে চলছে তখন আশি লাখ টাকা দাম ছিল। কিন্তু এখন কেনার মতো পাইকার খুঁজে পাচ্ছি না। ভেঙে বিক্রি করা ছাড়া অন্য বিকল্প কিছু দেখছি না। স্টাফ যারা ছিল তারা চইলা গেছে।

লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি আতাহার বেপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তো বিআইডব্লিউটিসির কাছে  লঞ্চ চালানোর জন্য রুট চাইতেছি। কিন্তু বাংলাদেশে এত লঞ্চ চালানোর মতো নৌরুট খালি নেই। আমরা ক্ষতিপূরণের জন্যও নৌ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছি কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছি না। একটি লঞ্চে ৫-৭ জন করে স্টাফ থাকে, তারা চাকরি হারিয়ে আজ নিঃস্ব।

ব.ম শামীম/এসপি