নড়াইলে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনার ঘটনায় নুরনবী (২৮) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (০৩ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় যশোরের মনিহার সিনেমা হলের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নুরনবী নড়াইল সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের মৃত ফয়েজ চৌকিদারের ছেলে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজ দেখে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নড়াইল সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা পরানোসহ শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পোড়ানো এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় ১৮০ জনকে আসামি করে মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিন বাদী হয়ে গত সোমবার (২৭ জুন) দুপুরে মামলা করেন।

এর মধ্যে আড়পাড়া গ্রামের মালেক মুন্সীর ছেলে মির্জাপুর বাজারের মোবাইল ফোনের মেকার শাওন (২৮), মির্জাপুর গ্রামের সৈয়দ মিলনের ছেলে অটোচালক রিমন (২২), একই গ্রামের মৃত জাবের বিশ্বাসের ছেলে রহমতুল্লাহ বিশ্বাস রনি (২২) এবং ওই গ্রামের মৃত আমির বিশ্বাসের ছেলে মাদরাসাশিক্ষক মনিরুল ইসলাম রুবেলকে (২৭) রোববার নড়াইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক আমাতুল মোর্শেদা তিন দিন করে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায় গত ১৭ জুন রাতে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে ভারতের বিতর্কিত বিজেপি নেত্রী নুপুর শর্মাকে নিয়ে ইতিবাচক পোস্ট করেন। ১৮ জুন কলেজের অন্য শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে তাকে পোস্টটি মুছে ফেলার অনুরোধ করেন। রাহুল তার পোস্টটি না মুছে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তারা কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটাসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেন। ঘটনার সময় অন্তত ১০ ছাত্র-জনতা আহত হন।

এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনার দিন ১৮ জুন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতার মালা পরিয়ে প্রতিবাদ জানান। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৮ জুন সহিংসতা সৃষ্টিতে নুরনবী লোকজনকে সংগঠিত করে। নুর-নবীকে নড়াইল জেলা পুলিশের বিশেষ দল অভিযান পরিচালনা করে যশোর থেকে আটক করে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

এসপি