কাট্টলী বিলে মাছ শিকারে ব্যস্ত জেলে

মাথার ওপর সুনীল শুভ্র আকাশ। তার নিচে বিস্তীর্ণ নীলাভ জলরাশি। বলছিলাম রাঙামাটির লংগদু উপজেলার কাট্টলী বিলের কথা। যে বিল ইতোমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে ভ্রমণপিপাসুদের।

৭২৫ বর্গকিলোমিটারের কাপ্তাই হ্রদের লংগদুর কাট্টলী বিল অংশটি মৎস্য সম্পদে পরিপূর্ণ। তাই এটিকে হ্রদের মাছের ভান্ডারও বলা হয়। শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে মাথা উঁচু করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয় দ্বীপগুলো। এই দ্বীপগুলোতে গড়ে উঠেছে জনবসতি। মাছ ধরেই জীবিকা চলে দ্বীপের মানুষদের।

কাট্টলী বিলের মাঝখানের দ্বীপগুলো তুলনামূলক ছোট হওয়াতে বর্ষায় এসব দ্বীপ পানির নিচে চলে যায়। এসব দ্বীপেও রয়েছে দু’একটি পরিবারের বাস। এসব পরিবার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বা যাতায়াতের জন্য নৌকা ব্যবহার করে। তাই এদের প্রত্যেকটি পরিবারে একটি করে নৌকা আছে।

কাট্টলী বিলের অন্যতম আকর্ষণ হলো হ্রদের পানিতে ভেসে বেড়ানো বিভিন্ন জাতের পরিযায়ী পাখি। শীত মৌসুমে এই বিলে জড়ো হয় হাজারো পরিযায়ী পাখি। হ্রদের নীল জল পেরিয়ে দেশি বোটে কাট্টলী বিল যেতে যেতে চোখে পড়বে পাখির ঝাঁক।

বিলে মাছের প্রাচুর্যতা আকৃষ্ট করে এই পরিযায়ী পাখিদের। তাই প্রতিবছর শীতের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে পাখির ঝাঁক। আর শিকারির উৎপাত না থাকায় পাখির উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে।

হ্রদের বুক চিড়ে যখন ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে এগিয়ে যায়, দূর থেকে দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে বসছে হ্রদের জলে। ছোট সরালি, টিকি হাঁস, বড় সরালি, মাথা মোটা টিটি, গাঙচিল, গাং কবুতর, চ্যাগা, চখাচখিসহ নানা প্রজাতির পাখিতে মুখরিত পুরো বিল। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও বিলের পানিতে খেলা করে পানকৌড়ির ঝাঁক। শীতের শেষেও এরা রয়ে যায়। 

মাছ শিকার আর ছোটখাটো ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাট্টলী বিল বাজার। হ্রদের এই অংশজুড়ে মাছ ধরা নৌকার সারি। বর্ষা ছাড়া সারাবছরই জেলেদের নৌকা মেরামতের কাজ চলে দ্বীপের ছোট্ট বাজারে। বাজারে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ছোটখাটো কিছু দোকান। 

দ্বীপের আরেক প্রান্তে রয়েছে শুঁটকিপল্লি। চাপিলা, চিংড়ি, কাচকিসহ নান রকম মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। কোনো রকম কীটনাশক মেশানো ছাড়াই শতভাগ প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি তৈরি হয় বলে এই শুঁটকির চাহিদা রয়েছে রাঙামাটিসহ আশেপাশের জেলা উপজেলাগুলোতে। রাঙামাটির পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এই শুঁটকি চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

কাট্টলী দ্বীপ

জলের অভ্যস্ত জীবন দেখতে দেখতে বোট এগিয়ে চলে সামনের দিকে। পাশ থেকে লংগদুর স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, লেকে পাখি শিকার এখন নেই বললেই চলে। তাই পাখির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর মাছ শিকারের আশায় প্রায় সারা বছরই পানকৌড়ির ঝাঁক থাকে।

কাট্টলী বিলকে পেছনে ফেলে বোট এগিয়েছে অনেক দূর। পাখির কলকাকলি মিলিয়ে যাচ্ছে কানের কাছ থেকে। দূরের পাহাড়গুলোকে আদরের স্পর্শ বুলিয়ে সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে দিগন্তে। অস্তগামী সূর্যের আভায় রাঙানো অপরুপ কাট্টলী বিল বিদায় জানাচ্ছে আগন্তুকদের। আমরাও বলি, প্রকৃতির মায়ায় ভালো থাকুক কাট্টলী বিল।

টগর রাজ মিশু/এসপি