এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে পরের দুই ঘণ্টা চলছে লোডশেডিং। নিয়মিত এমন লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দারা। এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এভাবে চলতে থাকলে আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এ সমিতির আওতায় জেলার পাঁচ উপজেলায় কয়েক লাখ আবাসিক গ্রাহকসহ শিল্প কারখানা, হাসপাতাল-ক্লিনিক, সেচ ও বাণিজ্যিক মিলে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহক রয়েছে। পুরো জেলায় ৫টি ফিডে এসব গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদার জন্য সবসময় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চলে। অথচ কয়েকদিন ধরে চাহিদার চেয়ে ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট কম পাওয়ায় গ্রাহকরা তাদের বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।

জয়পুরহাট শহরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। এতে প্রয়োজনীয় কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সব কাজেই বিদ্যুতের ব্যবহার। কিন্তু এভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে কল-কারখানা, বিভিন্ন অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ির কাজে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদ মৌসুমে বিদ্যুৎ না থাকায় বিপণি বিতানগুলোতে বেচাকেনা অনেকটাই কম।

কালাই আহলে হাদীস মসজিদ মার্কেট কমিটির সভাপতি মাসুদার রহমান হি-টলার বলেন, ঈদ মার্কেটে যেভাবে বিদ্যুৎ যাতায়াত করছে তাতে দোকানে বিক্রি তেমন হচ্ছে না। গরমের কারণে ক্রেতারা মার্কেটে আসছে না।

এদিকে চলতি মৌসুমে জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় ২০টি হিমাগারে প্রায় ২০০ মেট্রিক টনের বেশি আলু সংরক্ষণ রয়েছে। সংরক্ষণ করা আলুর মধ্যে অর্ধেকের বেশি বীজ আলু রয়েছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে আলু নষ্ট নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবে চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ না পাওয়ায় জেনারেটর দিয়ে হিমাগার সচল রেখেছেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

কালাই উপজেলার পুনট পাঁচপাইকা গ্রামের আলুচাষি ও ব্যবসায়ী মিঠু ফকির বলেন, পুনট কোল্ড স্টোরেজে প্রায় পাঁচ হাজার বস্তা আলু রেখেছি। এর মধ্যে দুই হাজার বস্তা বীজ আলু আছে। যেভাবে লোডশেডিং চলছে তাতে সংরক্ষণ করা আলু পচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কালাইয়ের পূর্ব সড়াইল এলাকার এম ইশরাত হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. রায়হান আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হিসাব করেছি গড়ে ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই। এই সময় হিমাগারের ভেতরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তখন তাপমাত্রা যাতে একেবারেই বেশি না হয় এর জন্য জেনারেটর চালু রাখা হয়। এতে ব্যয় বাড়ছে কিন্তু বিদ্যুতের মতো হিমাগারের ভেতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে আলু নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় হিমাগারের সেডে থাকা আলু শুকানো যাচ্ছে না।

জয়পুরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. এনামুল হক প্রামাণিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় সবসময় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এতে বেড়েছে লোডশেডিং। এর জন্য আমরা সবসময় ৩০/৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এ কারণে জয়পুরহাটে লোডশেডিং হচ্ছে।

এমএএস