নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বিশাল আকৃতির গরু ‘রাজা’। ১৩০০ কেজি (সাড়ে ৩২ মণ) ওজনের এই গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা। নিয়মিত খাদ্য তালিকার পাশাপাশি ছোলাবুট, মাল্টা, পেয়ারা ও কলা খাইয়ে নিজের সন্তানের মতোই ১১ ফুট দৈর্ঘ্য, ১০ ফুট প্রস্থ ও ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই ষাঁড়টিকে লালনপালন করেছেন কৃষক মোস্তফা মিয়া।

রাজাকে দেখতে প্রতিদিনই দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের কেরনখলা গ্রামের কৃষক মোস্তফা মিয়ার বাড়িতে ভিড় করছে লোকজন। তবে ১৩ লাখের কিছুটা কম হলেও রাজাকে বিক্রি করে দিতে চান মালিক।

গরুটির মালিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরুটির বর্তমান বয়স সাড়ে তিন বছর। দুই বছর আগে মোস্তফা মিয়া তার এক ভাতিজার কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে গরুটি কিনেছিলেন। তারপর নিজের সন্তানের মতোই আদর-যত্ন করে লালনপালন করেছেন গরুটিকে। রাজকীয় চলাফেরা ও খাবারের জন্য শখ করে গরুটির নাম রেখেছেন রাজা। অন্যান্য গরুর তুলনায় রাজার খাদ্য তালিকাও কিছুটা ব্যতিক্রম। ভুট্টা, খড়, ঘাস, গমের ভুসি, ধানের কুড়া ছাড়াও রাজাকে খেতে দেওয়া হয় ছোলাবুট, মাল্টা, পেয়ারা ও কলা। আর এ জন্য গরুর মালিককে প্রতি দিন অন্তত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মতো ব্যয় করতে হয় রাজার খাদ্য সংগ্রহের জন্য।

এদিকে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আশানুরূপ মূল্য পাওয়ার আশায় গত কয়েক মাস ধরে রাজার বিশেষ যত্ন নিচ্ছেন মোস্তফা মিয়া। আর এ জন্য খরচও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকার মতো। 

রাজার মালিক মোস্তফা মিয়া বলেন, রাজাই নেত্রকোণা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরু। রাজাকে ১৩ লাখ টাকা হলেই তিনি বিক্রি করে দেবেন। তবে মূল্য কিছুটা কম হলেও গরুটিকে বিক্রি করব। 

তিনি বলেন, অনেক শখ করে দুই বছর ধরে এই ষাঁড়টিকে আমি দেশীয় খাবার খাইয়ে যত্ন করে বড় করে তুলেছি। আমি বাড়ি না থাকলে পরিবারের অন্যরা তার পরিচর্যা করেছে। বর্তমানে রাজার খাবারের জন্য প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। গরুটিকে কৃত্রিম কোনো কিছুই খাওয়াইনি। 

মোস্তফা মিয়া বলেন, আশা করছি ঈদের বাজারে গরুটিকে ভালো দামে বিক্রি করতে পারব। ১৩ টাকা হলেই গরুটি বিক্রি করে দেব। তবে মূল্য কিছুটা কম হলেও আমার আপত্তি থাকবে না। আমি রাজাকে বিক্রি করে দিতে চাই। কারণ এতো বড় গরু আমার পক্ষে লালনপালন করা আর সম্ভব হচ্ছে না।

এলাকার লোকজনও প্রত্যাশা করছেন মোস্তফা মিয়া যেন রাজাকে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারেন। এতে তারাও বেশ খুশি হবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, মোস্তফা মিয়ার গরুটির মতো এতো বড় গরু আমাদের জেলার মধ্যে মনে হয় আর একটাও নেই। তিনি খুব কষ্ট করে গরুটি লালনপালন করেছেন। আমাদের চাওয়া তিনি যেন তার কষ্টের ন্যায্যমূল্য পান।

এদিকে জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ১০ উপজেলায় এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৫৪টি পশুর হাট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী হাট রয়েছে ৩১টি। কোরবানির পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রতিটি হাটেই বসানো হয়েছে মেডিকেল টিম। 

জিয়াউর রহমান/আরএআর