চারদিকে থই থই করছে পানি। সুনামগঞ্জের অন্যতম বৃহত্তম হাওর ‘দেখার হাওর’ পানিতে টইটম্বুর। যার মাঝখানে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আহসানমারা এলাকার পাশে পানিবন্দি একটি গ্রাম। এই গ্রামের প্রায় সবাই শ্রমজীবী। গ্রামের মধ্যভাগে রড সিমেন্টের একটি লম্বা খাম্বার উপরিভাগে লাগানো মসজিদের দুটি মাইক। মাইক থাকলেও গত ২০ দিন ধরে মাইকে বাজছে না মোয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি। শোনা যাচ্ছে না ইমামের তেলাওয়াত। কারণ আজান দেওয়া বা নামাজ পড়ার আর কোনো উপায় নেই মসজিদটিতে। 

গত ১৬ জুন ভয়াবহ বন্যায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের গোয়াচুড়া গ্রামের নতুন জামে মসজিদ। ২০১৫ সালে নির্মিত গোয়াচুড়া গ্রামের টিনশেড মসজিদটি এখন দেখলে মনে হবে কোনো এক ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত একটি বসতঘর। মাইক লাগানো খাম্বাটি না থাকলে দেখে বুঝার উপায় নেই এখানে একটি মসজিদ ছিল। যে মসজিদে নামাজ পড়তেন আশপাশের কয়েক গ্রামের মুসল্লি। 

সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যার পানির আগ্রাসনে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে মসজিদের কাঠামো। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে মসজিদের আসবাবপত্র। বাইরে পড়ে আছে মসজিদের ইমামের খুতবা দেওয়ার মিম্বর,  আজান দেওয়ার স্ট্যান্ড। মেঝেতে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দেয়াল ঘড়ি,  জায়নামাজ, কোরআন শরীফ রাখার রিহাল। গ্রামের হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষগুলো বুঝে উঠতে পারছেন না কীভাবে মোকাবিলা করবেন এই ক্ষতি। বন্যার কারণে নিজেদের পেটে নেই খাবার। মসজিদ গড়বেন কী দিয়ে। সরকারি কিংবা বেসরকারি সহায়তায় মসজিদটি পুনরায় নির্মাণ করে আবারও নামাজ পড়ার সুযোগ পাবেন- এমনটাই প্রত্যাশা তাদের । 

স্থানীয়রা জানান, এটি শুধু মসজিদ না, এখানে নামাজের পাশাপাশি শিশুদের ইসলামিক শিক্ষা দেওয়া হতো। ছোট ছোট শিশুরা সকালে পড়তে আসত। নামাজের সঙ্গে শিশুদের পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব মসজিদটি পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। 

হাছনপছন্দ এলাকার বোরহান উদ্দিন বলেন, এই বন্যায় আমাদের মসজিদ ভেঙে পড়েছে। মসজিদের বাঁশ, টিন সব ভেসে গেছে। এতদিন ধরে মসজিদে নামাজ পড়তে পারছি না। একটা মানুষ এসে কোনো খোঁজ নিল না। 

একই এলাকার ইলিয়াস আহমেদ বলেন, আমাদের এলাকার মানুষ দরিদ্র। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি এলাকার ছোট ছোট শিশুরা এসে এখানে শিক্ষা নিত। দুঃখের বিষয় আমরা চারটা জুমার নামাজ পড়তে পারিনি। মসজিদে ৩-৪ ফুট পানি ছিল। এখন একদম বিধ্বস্ত। 

অত্র মসজিদের মুসল্লি আছদ্দর আলী বলেন, ঘরবাড়ি যা নিবার নিয়ে গেছে। এখন মসজিদটার জন্য খুব কষ্ট হয়। আমরা মসজিদে নামাজ পড়তে পারছি না। 

স্বেচ্ছাসেবক আম্মার আহমেদ বলেন, এই মসজিদটার খুবই খারাপ অবস্থা। গ্রামের সবাই দিনমজুর।  আল্লাহ যদি চান আপনাদের সহযোগিতায় আমরা মসজিদ আবার আগের চেয়ে ভালো করে নির্মাণ করব। 

মসজিদের পরিচালক মো আব্দুল হাকিম বলেন, দুইবার পানি উঠে মসজিদে। তিনবারের সময় আর মসজিদের মালামাল কিছুই বাঁচাতে পারিনি। মসজিদের লাইট, কার্পেট, সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। 

লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, আমার একটি ওয়ার্ডে দুটি মসজিদ। দুটি মসজিদই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি ইউএনও স্যার বরাবর মসজিদ মেরামতের আবেদন করেছি এবং সরেজমিনে উনাকে দেখিয়েছি। উনি আশ্বাস দিয়েছেন মসজিদের জন্য আলাদা বরাদ্দ আসলেই আমাদের মসজিদটি মেরামত করে দেবেন। 

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার ঢাকা পোস্টকে জানান, সুনামগঞ্জে মসজিদ, মন্দির,  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আরও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আপাতত শুধু বসতঘর নির্মাণের জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। পরবর্তীতে মসজিদের জন্য বরাদ্দ আসলে আমরা তা দ্রুত বণ্টন করে দেব। 

আরএআর