নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝে সবুজ-শ্যামল আর নয়নাভিরাম গ্রাম চর ধলেশ্বরী। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ডিঙি নৌকা। এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ মৎস্যজীবী। তবে সম্প্রতি অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন গবাদিপশু পালন করে। গবাদিপশু তাদের অর্থনৈতিক জীবন সমৃদ্ধ করেছে।

গত সোমবার (৪ জুলাই) নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার চর ধলেশ্বরীতে গিয়ে গরু লালনপালন করে জীবন বদলানোর অনেক গল্প জানা যায়। 

স্থানীয়রা জানান, চর ধলেশ্বরীতে বাস করে প্রায় ৬ শ পরিবার। এদের বেশিরভাগের জীবিকা নির্বাহের পথ মৎস্য শিকার। তবে গো-খাদ্যের সহজলভ্যতার (ঘাস, লতাপাতা) সুযোগ কাজে লাগিয়ে গবাদিপশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার। প্রাকৃতিক উৎসের বাইরে অন্য গো-খাদ্যের (দানাদার খাদ্য) দাম কমিয়ে আনা গেলে এবং সরকারি সহায়তা পেলে তারা নিজেরা যেমন আরও স্বাবলম্বী হতে পারবেন তেমনি দেশের প্রাণিসম্পদকেও সমৃদ্ধ করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন তারা।

আব্দুল হক-জোৎস্না দম্পতি যেন এই গ্রামের ছোট ছোট সব খামারির অনুপ্রেরণা। তাদের দেখাদেখি ওই এলাকার রফিকুল ইসলাম, ফরহাদ মিয়া, বজলু শেখ, রকি আক্তার, মোখলেস ও আসলামসহ নাম না জানা অনেকে খামার করেছেন এবং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তি এনেছেন নিজেদের জীবনে

৩৫ বছর ধরে চর ধলেশ্বরীতে বাস করেন আব্দুল হক (৫৫)। ৩৫ বছর আগে জোৎস্না বেগমের সঙ্গে ঘর বাঁধেন তিনি। শুরুতে দিনগুলো বেশ কষ্টের ছিল তাদের। গরুর খামার করে তাদের দিন বদলেছে। এখন তাদের বড় একটি দোচালা ঘর আছে। পাশাপাশি গরুর বড় দুটি শেড, বায়োগ্যাস প্লান্ট ও জমিজমা আছে। 

গবাদিপশু পালন করে আব্দুল হক এক ছেলেকে পাঠিয়েছেন প্রবাসে, আরেক ছেলেকে দিচ্ছেন কারিগরী শিক্ষা। পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য মেয়েকে পড়াচ্ছেন স্কুলে।

আব্দুল হক বলেন, এই চরে মাত্র দুটি গরু দিয়ে শুরু করেছি। আল্লাহর রহমতে এখন আমার ২৫টি গরু আছে। এ বছর ২০টি গরু বিক্রি করেছি। বিক্রির লায়েক আরও ৯টি গরু আছে। যদি বাজার ভালো পাই তবে বিক্রি করব, নয়তো আগামী বছরের জন্য রেখে দেব।

আব্দুল হকের স্ত্রী জোৎস্না বেগমও (৪০) তাদের আয়-উন্নতিতে খুশি। হাসি মুখে বলেন, আগের মতো এখন আর কষ্ট নাই। বায়োগ্যাসে গরুর খাবার ও ঘরের রান্ন-বান্না সব হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে দোচালা ঘর, বায়োগ্যাস ও জমিজমা করেছি; এখন আমরা স্বাবলম্বী পরিবার।

আব্দুল হক-জোৎস্না দম্পতি যেন এই গ্রামের ছোট ছোট সব খামারির অনুপ্রেরণা। তাদের দেখাদেখি ওই এলাকার রফিকুল ইসলাম, ফরহাদ মিয়া, বজলু শেখ, রকি আক্তার, মোখলেস ও আসলামসহ নাম না জানা অনেকে খামার করেছেন এবং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তি এনেছেন নিজেদের জীবনে।

চর ধলেশ্বরীর দক্ষিণ অংশে বসবাস রফিকুল ইসলামের (৬২)। তিনি বলেন, আমি ৩৬ বছর ধরে মাছ শিকার করি। এই কাজ করেই সংসার চালাই। তবে এখন আর আগের মতো গাঙে মাছ পাওয়া যায় না। কিছু বছর ধরে গরু লালনপালন শুরু করেছি। কোরবানির সময় সেগুলো বিক্রি করি। ঘর-দুয়ার যা করেছি এই গরু বিক্রি করেই। সারা বছর কষ্টের পর কোরবানির সময় যখন কিছু টাকা লাভ আসে, তখন বেশ ভালো লাগে। 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতাউর রহমান ভূঁইয়ার দাবি, শহরের বড় খামারের চেয়ে সরকার প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের সুবিধাদি নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। মূলত তারাই প্রাণিসম্পদের সমৃদ্ধি ঘটিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখেন।

এ সময় তিনি চরধলেশ্বরীর আব্দুল হক-জোৎস্না দম্পতির সফলতার উদাহরণ দেন এবং তাদের শ্রম ও নিবেদনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। 

আরআই/জেএস