মইন আহমেদের বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলায়। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে রাজধানী ঢাকা হতে বেরিয়েছেন তিনি। 

এদিকে, এক জেলা হতে অন্য জেলায় বাইক চালিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজধানী থেকে বিভিন্ন সরু সড়ক হয়ে শিমুলিয়া ঘাট পর্যন্ত এসে পৌঁছালেও ঘাটে এসে পড়েছেন চরম বিপাকে। শিমুলিয়া ঘাটে সারিবদ্ধভাবে ৪টি ফেরি বাধা থাকলেও একটি ফেরিও যাত্রী এবং পরিবহন পারাপার করছে না। চেষ্টা করছিলেন ট্রলার পাওয়া যায় কিনা। তাও খুঁজে না পেয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যাচ্ছেন শিমুলিয়া ঘাট থেকে মহাসড়কের দিকে। 

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যায় শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে এলাম। কিন্ত নদী পার হওয়ার জন্য কিছুই পেলাম না। তাই আবার ফিরে যাচ্ছি। পাটুরিয়া ঘাট হয়ে বাড়ি যাব। বাড়িতে তো যেতেই হবে পরিবার পরিজনরা সবাই অপেক্ষায় আছে।

রাসেল আহম্মেদের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরায়। নারায়ণগঞ্জে থেকে চাকরি করেন তিনি। বাড়ি যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন শিমুলিয়া ঘাটে। এঘাট ওঘাট ঘুরেও পদ্মা নদী পাড়ি দেওয়ার জন্য কিছু না পেয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন শিমুলিয়া ঘাটে। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ফতুল্লা এলাকার ভাড়া বাসায় কেঁচি গ্যাটের ভেতরে মোটরসাইকেলটি রাখি।  ঈদে ওই বাসার সবাই যার যার বাড়ি চলে গেছে। ফাকাঁ বাসায় মোটরসাইকেলটি কোন ভরসায় রাখি। তাই সঙ্গে নিয়েই বেরিয়েছি। ভাবছিলাম শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় এলে ট্রলারে হলেও মোটরসাইকেলটি পার করতে পারব। কিন্তু ঘাটে এসে কিছুই পাচ্ছি না। দেখি রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে কোনো উপায় হয় কীনা।

বিকালে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় দেখা হয় আরো ৭/৮ জন মোটরসাইকেল আরোহীর সঙ্গে। তারা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে পরামর্শ করছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা নিজেদের পরিচয় না দিয়ে বলেন, অনেক কষ্ট করে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘাটে এসেছি। আসা করেছিলাম নদী পারি দেওয়ার জন্য কিছু একটা পাব। কিন্তু ঘাটে কিছুই পেলাম না। সেতু হওয়ার আগে ফেরিতে মোটরসাইকেল পারাপার করতে পারতাম। এখন ফেরিতেও পার হতে পারছি না, সেতু দিয়েও না। এখন সেতু আমাদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিল।

পদ্মা সেতু পুনর্বাসন কেন্দ্রের সামনের কুমারভোগ এলাকায় রাস্তার মধ্যে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বেশ কিছু যুবককে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, এসে যেহেতু পড়েছি, নদী তো পার হতেই হবেই। দেখি দাঁড়িয়ে থেকে রাতের বেলায় পার হওয়ার জন্য কোনো ট্রলার পাওয়া যায় কিনা।

সরেজমিনে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই ঘাট এলাকায় সুনশান নিরবতা। এক সময় যে ফেরিগুলোর ঈদের এ সময়ে ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকার একবিন্দু সুযোগ ছিল না। সেই ফেরিগুলোর মধ্যে ফেরি কুঞ্জলতা, ফেরি ক্যামলিয়া, ফেরি ফরিদপুর, ফেরি কুমিল্লা ঘাটে বাধা রয়েছে।

এদিকে শিমুলিয়া ঘাটে অল্প সংখ্যক যাত্রী দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসছে। এ সমস্ত যাত্রীরা ঘাটে এসে স্পিডবোট ও ট্রলারে পদ্মা নদী পার হয়ে গন্তবে ছুটছেন। তবে ঘাট থেকে কোনো ফেরি এবং লঞ্চ চলাচল করছে না।

ব.ম শামীম/এমএএস