ভোলাগামী যাত্রীরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা (ট্রলার) ও স্পিডবোটযোগে ঝুঁকি নিয়ে লক্ষ্মীপুর থেকে মেঘনা নদী পাড়ি দিচ্ছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ট্রলার-স্পিডবোটে যাতায়াত সরকারিভাবে নিষেধ থাকলেও একটি চক্র যাত্রী পারাপার করে পকেট ভারি করছে। এদিকে প্রশাসনের নজরদারি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। 

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দিনব্যাপী সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট এলাকায় দুই শতাধিক যাত্রীকে ভোলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে দেখা যায়। মেঘনা নদী হয়ে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌ-রুটটি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সহজ যোগাযোগ মাধ্যম। প্রতি ঈদেই এ রুটে যাত্রীদের চাপ দেখা যায়। 

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ট্রলার ও স্পিডবোটে ঝুঁকি নিয়েই এ রুটে ঘরমুখো হাজারো মানুষ মেঘনা পাড়ি দেয়। এতে ঝুঁকির ভয়াবহতাকে তোয়াক্কা করে না যাত্রী ও সুবিধাবাদী চক্র। ট্রলারে প্রতি যাত্রী থেকে ৫০০ টাকা ও স্পিডবোটে ১ হাজার টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

লঞ্চঘাট সূত্র জানায়, মজুচৌধুরীর হাট থেকে ভোলা যেতে দিনব্যাপী বিভিন্ন সময় ছোট ছোট ও মাঝারি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এছাড়া ফেরিতেও যাত্রী পারাপারে সুবিধা রয়েছে। এতে লঞ্চের ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা ও ফেরিতে ৬৫ টাকা নির্ধারিত। কিন্তু স্বজনদের কাছে দ্রুত যাওয়ার জন্য মানুষ বাড়তি টাকা দিয়ে ট্রলার ও স্পিডবোট দিয়ে যাতায়াত করে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্পিডবোট ও ট্রলারে যাতায়াত প্রকাশ্যেই হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এটি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা দেখেও না দেখার মতো রয়েছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ঈদে ঘরমুখো মানুষ একটু আগে বাড়ি যেতে লঞ্চঘাটে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এরমধ্যে অনেকেই স্পিডবোট ও ট্রলার খুঁজে নেয়। অধিকাংশ সময় দেখা যায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ মেঘনা নদী পাড়ি দেয়। 

ভোলা বাপতা হাজিরহাটের বেলাল হোসেন ও ঝালকাঠির নলছিটির ভৈরব পাশা গ্রামের মো. লিটনের সঙ্গে কথা হয়। তারা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ও হামছাদী ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থকেন্দ্রে চাকরি করেন। এরমধ্যে বেলাল চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা ও লিটন ওয়ার্ড বয়। তারা জানায়, স্পিডবোট ও ট্রলারে যাত্রা নিরাপদ নয়। এজন্য তারা ফেরি ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। যাত্রাপথে তারা কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে রাজি নন। 

মজুচৌধুরীর হাট ফেরিঘাটের কোস্ট গার্ডের দায়িত্বরত সদস্য মো. আকাশ সাংবাদিকদের বলেন, ট্রলার-স্পিডবোটের মাধ্যমে যাতায়াত সরকারিভাবে নিষেধ রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমাদের অগোচরেই একটি চক্র যাত্রীদের ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে নদী পারাপার করছে।

মজুচৌধুরীর হাট ফেরিঘাটের প্রান্তিক সহকারী রেজাউল করিম রাজু বলেন, এখনো যাত্রীদের কোনো চাপ নেই। ফেরিতে যাত্রী পারাপারের সুবিধা রয়েছে। প্রতি যাত্রী থেকে সরকার নির্ধারিত ৬৫ টাকা ভাড়াতেই ইজারা দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতের জন্য লঞ্চঘাট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হবে। আর খোঁজখবর নিয়ে চক্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস