গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে টাঙ্গাইলের গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বিকেল থেকে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে সৃষ্ট যানজট শুক্রবার (৮ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত গড়িয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ঈদে ঘরমুখো মানুষ। 

সরেজমিনে দেখা যায়, চন্দ্রা দক্ষিণে কবিরপুর, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান থেকে ঢাকাগামী লেনে গাজীপুর বাইপাস, কোনাবাড়ী থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যানজট ছড়িয়েছে। জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত পুরো সড়কেই যানজটের চাপ রয়েছে। এছাড়াও সাভার-বাইপাইল এলাকার যানজট চন্দ্রা ও কালিয়াকৈর ছাপিয়ে টাঙ্গাইল জেলা পর্যন্ত ছাড়িয়েছে। 

এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যানজটে দেখা দিয়েছে। বাইপাস, হারিকেন, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি, স্টেশন রোড, মিল গেট, টঙ্গী ও আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যানবাহনের ধীরগতি থাকায় মোড়ে মোড়ে অল্প সময়ের যানজট তৈরি হচ্ছে। তবে সে যানজট বেশি সময় স্থায়ী হচ্ছে না। মোড়ে মোড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানোর কারণে এ যানজটের তৈরি হচ্ছে। যানজটে পড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যাত্রীরা তীব্র গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় চলাচল করছে যাত্রীরা। বাস সংকটে যাত্রীরা পিকআপ ও মালবাহী ট্রাকে চলাচল করছে। অন্যদিকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার মহাসড়কে যানজটবিহীন পরিবহন সংকট নিয়ে ট্রাক-পিকআপে চলাচল করছেন যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নবীনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন সুমন আহমেদ। পুরো রাত মহাসড়কে কাটিয়ে সকাল ১০টার দিকে তিনি চন্দ্রা এলাকায় পৌঁছান। যানজটে তীব্র গরমে তিনি পরিবার নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, ভিড়ের দুর্ভোগ এড়াতে রাতেই বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু রাতের যাত্রায় আরও দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। পুরো রাতই কাটাতে হয়েছে বাসে। বাকি পথ যেতে কত সময় লাগবে তা একমাত্র আল্লাহই জানে।

মামুন সরকার চাকরি করেন গাজীপুরের বাইপাস এলাকায় একটি কারখানায়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় কারখানা ছুটির পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বগুড়ার শেরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। বাসা থেকে বের হয়েই জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকায় থেকে সরাসরি শেরপুরের বাস না পেয়ে তিনি ভেঙে ভেঙে চন্দ্রা এলাকায় পৌঁছান। কিন্তু যানজট ও প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে রাত ৯টা পর্যন্ত চন্দ্রা থেকে বাসে উঠতে না পেরে ফিরে আসেন। শুক্রবার ভোরে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য বের হলেও সকাল ৯টা পর্যন্ত তাকে বাসের জন্য চন্দ্রা এলাকায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

তিনি বলেন, যানবাহন সংকটে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে তিনি পরিবার নিয়ে গাড়িতে উঠতে পারেননি। এছাড়াও অন্যান্য সময়ের চাইতে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। 

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে যাওয়ার জন্য কালিয়াকৈরের শফিপুর থেকে রওনা হয়েছেন বুলবুল আহমেদ। তিনি কারখানা ছুটির পরপরই বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন। কিন্তু শফিপুর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত আসতেই তার দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। এখন দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গাইবান্ধার জন্য গাড়িতে উঠতে পারেননি।

রংপুরে যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষায় রুহুল আমিন ও তার পরিবার। তিনি বলেন, বছরের অন্যান্য সময় যে পরিমাণ ভাড়া দিয়ে বাড়ি যেতাম এখন নরমাল গাড়িতে ভাড়া চাচ্ছে জনপ্রতি ১৫০০ টাকা। আমি একা হলে তবুও যাওয়া যেত কিন্তু পরিবারের সদস্য থাকায় সবাইকে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে গাড়িতে উঠতে পারছি না। এছাড়াও রোদ ও তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। 

ময়মনসিংহগামী আলম এশিয়া পরিবহনের চালক গণি মিয়া জানান, মহাখালী থেকে বের হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত পার হতেই কয়েক ঘণ্টা সময় লেগেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে জৈনাবাজার পর্যন্ত যানজট ছাড়াই ময়মনসিংহে যাওয়া যাচ্ছে।

আব্দুল আজিজ পরিবার নিয়ে জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নয়নপুর এলাকায় কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, বছরের অন্যান্য সময় জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহের ভাড়া ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে সেই ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত চাচ্ছে। তাই ভেঙে ভেঙে ছোট গাড়িতে করে বাড়ি যাচ্ছি। ছোট গাড়িতেও অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সবশেষে মাওনা চৌরাস্তা থেকে একটি পিকআপে জনপ্রতি ২০০ টাকায় ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তিনি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আল মামুন জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করছে। অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে থেমে থেমে যানজট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত যান ও যাত্রী চাপের কারণেই মহাসড়কে যানজট হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।

সালনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন জানান, কারখানা একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর এই চাপ আরও বেড়েছে। যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া বন্ধ ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বলেন, ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ কমাতে জেলা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করে যাচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেও যানজট নিরসনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

শিহাব খান/আরএআর