মৌলভীবাজারের বাজারে গরু আর মানুষের যেন একসঙ্গে বসবাস। গরু শুয়ে আছে, ঠিক পাশেই শুয়ে আছেন তার মালিক। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্রি করতে আসা এসব গরুর মালিকের কেউ কেউ আবার ঘুম ঘুম চোখে জটলা করে বসে আছেন গরুর আশপাশে। গরু আর তার মালিকের একসঙ্গে বসবাসের এমন চিত্র দেখা গেছে মৌলভীবাজারের স্টেডিয়াম মাঠে রাতের গরুর হাটে।

শুক্রবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, সিরাজগঞ্জ থেকে স্টেডিয়াম মাঠে পশু নিয়ে এসেছেন আব্দুর রহিম। সব পশুই তিনি বিক্রি করেছেন। কিন্তু গরুর সঙ্গে কাটানো সময়গুলোর কথা ভেবে এখনো তিনি কষ্ট পাচ্ছেন।  

আব্দুর রহিম বলেন, এই পশুর হাটে শত মশা-মাছি বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে গরু নিয়ে বসেছি। তাও বাজারের অবস্থা তেমন ভালো না। লাভ-ক্ষতি করে হলেও সব বিক্রি করে ফেলেছি। আমরা ঠিক মতো না খেলেও গরুকে খাবার দিয়েছি সঠিকভাবে। গরুর যেন কষ্ট না হয় সে দিকেও খেয়াল রেখেছি।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ছিকরাইল গ্ৰাম থেকে আসা সালামত খান বলেন, অনেক কষ্টে লালন-পালন করে গরুগুলো এখানে নিয়ে এসেছি কিছু টাকা পাব বলে। গরু বিক্রি করে টাকা পাওয়ার পর আনন্দের বদলে উল্টো কষ্ট হয়, খুব খারাপ লাগে। 

নাজিরাবাদ গ্ৰামের আনোয়ার হোসেন বলেন, গরুগুলোকে পালন করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। বিক্রি করলে টাকা পাব ঠিকই কিন্তু গরুকে কখনো ভুলতে পারব না। অনেক কষ্ট করেছি, অনেক টাকা খরচ করেছি। সন্তানের মতো লালন-পালন করেছি। টাকা পেলে‌ও সেই কষ্ট শেষ হবে না। 

শেষ মুহূর্তে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। তবে হাটে অনেক ক্রেতা থাকলেও পর্যাপ্ত গরু ছিল না। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার কারণে এবার অনেকেই হাটে পশু নিয়ে আসেননি। এতে করে এ বছর বিরাট ক্ষতি হয়েছে। শেষ দিন পর্যাপ্ত ক্রেতা ও বিক্রি ভালো হলেও এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব না। 

জেলার এম সাইফুর রহমান স্টেডিয়ামের বাইরে পশুর হাটেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল পশুর হাট, কমলগঞ্জের আদমপুর ও শমশেরনগর, রাজনগর কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায় হাট বসেছে। 

আরআই