অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনছুর আলী ও তার স্ত্রী

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মাণ করা ‘বীর নিবাস’ চলে গেছে সচ্ছল ও ক্ষমতাবানদের কব্জায়। তদবির না করায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, বীর নিবাসের তালিকায় রাজশাহীর দুর্গাপুরে ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম সুপারিশ করে পাঠানো হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নাম পাস হয়েও আসে। তবে বীর নিবাসের বাজেট দেওয়া হয় ৯ জনের।

তালিকায় ৪ নম্বরে ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনছুর আলীর নাম, ৮ নম্বরে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনিসুর রহমান মোল্লা এবং ১১ নম্বরে ছিলেন জোনাব আলী। এই তিন বীর মুক্তিযোদ্ধাই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বীর নিবাস পাওয়া মো. হাবিবুর রহমান গাজীর জমির পরিমাণ প্রায় ৮ বিঘা। এক দাগেই তার রয়েছে ৫ বিঘার বেশি জমি। তিনি দুর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের আপন মামা শ্বশুর। তালিকায় হাবিবুরের নাম ছিল ৭ নম্বরে।

ওই তালিকায় ৫ নম্বরে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ও ম নুরুল আলম হিরুর নামেও বরাদ্দ হয়েছে ঘর। তিনি একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার জমি রয়েছে প্রায় ১৮ বিঘা। হিরু স্থানীয় সংসদ সদস্যের ‘ডান হাত’ খ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক টুলুর শ্বশুর।

১২ নম্বরের মৃত জোনাব আলীর স্ত্রী ঘর পেয়েছেন। তিনিও ১৩ বিঘা জমির মালিক। বীর নিবাস পাওয়া কয়েকজনের সন্তান সরকারি চাকরিজীবী। অথচ ৮ নম্বরে থাকা আনিসুর রহমান মাত্র ২ বিঘা জমির মালিক হয়েও পাননি বীর নিবাস। আর মুনছুরের সম্বল বলতে ১৬ শতাংশের বসতভিটা। টিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। বাকি ১১ শতক জমিতে তার জীবিকার উৎস।

তথ্যমতে, উপজেলা পর্যায়ে ৫ সদস্যবিশিষ্ট বাছাই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। একই কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও সদস্য উপজেলা প্রকৌশলী। কমিটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মনোনীত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার থাকার কথা। কিন্তু দুর্গাপুরে বাছাই কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না দুই মুক্তিযোদ্ধা।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুনছুর আলী প্রামানিক বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না, ওপরের লোক এবং ওই এমপি ও চেয়ারম্যানকে ধরতে পারিনি, তাই ঘর পাইনি। ঘর না পাওয়া আমরা তিনজনই অসচ্ছল। তাও ঘর পেলাম না। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতি নিয়ে পাঁচজনের পরিবার। সবার খাবার জোগাতে বৃদ্ধ বয়সেও মাঠে ছুটতে হয়। মুক্তিযোদ্ধা নেতারা আমাকে বলেছিল, তোমাদের বাড়ি হয়ে গেছে।

কারও কাছে যেতে হবে না, কিছু বলতেও হবে না। যখন অন্যদের ইট নামতে শুরু করে, তখন বলা হয়, তোমাদের ঘর পরে হবে। বুঝে উঠতে পারছি না কাকে কী বলব। বলেও তো কোনো লাভ নাই।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মনোনীত বাছাই কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ ইনসান বলেন, আমি মিটিংয়ে ছিলাম না। পরে এক দিন ইউএনও ডেকে স্বাক্ষর চেয়েছিলেন, গিয়ে স্বাক্ষর করে চলে এসেছি। কমিটির আরেক সদস্য শ্রী সন্তোষ কুমার সাহা বলেন, বাছাইয়ে অনিয়ম হয়েছে।

তবে স্বচ্ছভাবে তালিকা হয়েছে দাবি করে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, কমিটি যাদের নাম দিয়েছে, তাদের নামই চূড়ান্ত হয়েছে। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।

আবাসন নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এম ইদ্রিস সিদ্দিকী বলেন, দূর্গাপুরে ৯ জনের বাজেট দেওয়া হয়েছে। তালিকা থেকে ক্রমিক অনুযায়ী বীর নিবাস পাওয়ার কথা, কিন্তু মাঝ থেকে তাদের নাম কেন বাদ পড়ল বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন বলতে পারবে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরআই