গত কয়েক বছরের মতো এবারও সিন্ডিকেটের কব্জায় রাজশাহীর কোরবানির পশুর চামড়া। ফলে সরকার নির্ধারিত দাম পাননি সাধারণ মানুষ। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সামান্য লাভ রেখে চামড়া বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। ফলে চামড়ার লাভের টাকা চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের পকেটে।

সাধারণ মানুষ এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পানির দামে চামড়া কিনছেন। তবে চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা পুঁজি সংকটে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনতে পারছেন না।

কোরবানির দিন বিকেল থেকেই রাজশাহীতে চামড়া কেনা-বেচা চলছে। গরুর চামড়ার নামমাত্র মূল্য পেলেও অনেকেই ছাগল-ভেড়ার চামড়া ফ্রিতে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

ঈদের দিন পাড়া মহল্লায় ঘুরে ঘুরে কোরবানি পশুর চামড়া কেনেন জিয়ারুল ইসলাম। জেলার পবা উপজেলার মধুপুরের বাসিন্দা জিয়ারুল জানান, এবার তিনি গরুর চামড়া কিনেছেন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া ৫-৩০ টাকায়। দিন শেষে সেগুলো তিনি স্থানীয় আড়তে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেছেন।

এই মৌসুমী ব্যবসায়ীর অভিযোগ, নানা ছুতোয় আড়তদাররা ছাগলের চামড়া নেননি। সেগুলো আড়তেই রেখে এসেছেন। তবে গরুর চামড়া বিক্রি করছেন কেনা দামেই। কোনো মতে খরচটা উঠে এসেছে।

এ নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। তবে লোকজন এবার চামড়ার ভালো দাম পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ। তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়ার বেচা-কেনা হয়েছে রাজশাহীতে। তবে চামড়া ছড়ানোর সময় অনেকে কেটে ফেলেন।

সেগুলো চোখের আন্দাজে দাম দেওয়া হয়। আর খুব বেশি কাটা-ছেঁড়া হলে সেই চামড়া বিক্রি করা যায় না।  তাই তারাও সে চামড়া কেনেন না।

আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, এবার মাদ্রাসাগুলোর মাধ্যমে বেচা-কেনা বেশি হয়েছে। অনেকে মাদ্রাসাই সরাসরি চামড়া দান করে গেছেন। আর এবার তারা গরুর চামড়া ৬০০-১ হাজার টাকা করেও কিনেছেন। খাসির চামড়া ৪০-৮০ এবং বকরির চামড়া ২০-৪০ টাকা দরে কিনেছেন।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, এবার জেলায় আনুমানিক ১ লাখ ৯৪ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ৭২ হাজারের গরু কোরবানি হয়েছে। আর এ পর্যন্ত জেলায় ৪৭ হাজার ২৫০ পিস গরু এবং ৭৬ হাজার ৭৫০ পিস ছাগলের চামড়া সংগ্রহ হয়েছে।

কোরবানির দিন থেকেই রাজশাহীতে চামড়া সংগ্রহ কার্যক্রম দেখভাল করছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী। চামড়া নিয়ে কোথাও কোনো অব্যবস্থাপনার খবর নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, কেবল রাজশাহীতেই প্রতি বছর কোরবানি হয় প্রায় ৪০ হাজার গরু-মহিষ, ২০ হাজার ভেড়া এবং এক লাখ ছাগল। স্থানীয় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে আড়তে পৌঁছে দেন। আড়তগুলো এসব চামড়া লবন দিয়ে সংরক্ষণের ১৫ থেকে এক মাসের মধ্যে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরআই