বিনোদন পিপাসু রংপুরবাসীর জন্য শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চিকলি বিল পাড়ে গড়ে উঠেছে চিকলি ওয়াটার পার্ক। প্রাকৃতিক আবেশে ভরা দর্শনীয় এই পার্ক মন কেড়েছে রংপুরের মানুষের। বিখ্যাত চিকলি বিলের শোভা-সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করা এই পার্কটি দেশবাসীর কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

২০১৮ সালে বেসরকারি উদ্যোগে চিকলি ওয়াটার পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এখনো পার্কের ৪০ ভাগ কাজ বাকি। এরই মধ্যে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এটি।

এককালে চিকলি বিল ব্যবহৃত হতো সি প্লেনের ল্যান্ডিং স্টেশন হিসেবে। শীত আসলেই নানা অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠত এই বিল। আর এখন চিকলি ওয়াটার পার্কে বদলে গেছে পুরো চিত্র।

বর্তমানে চিকলির বিল দুই ভাগে বিভক্ত। বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্র পার হয়ে সাগরপাড়া দিয়ে যাওয়া যায় সিটি চিকলি পার্কে। আর রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ রোড হয়ে হনুমানতলা ব্রিজের পাশে গেলেই চোখে পড়বে চিকলি ওয়াটার পার্ক। দুটি পার্কের প্রবেশপথ আলাদা হলেও এক পার্ক থেকে আরেক পার্কের শোভা-সৌন্দর্য সহসাই দেখা যায়।

নয়নাভিরাম চিকলি ওয়াটার পার্কের আকর্ষণ কৃত্রিম জলপ্রপাত। এর কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই এর রূপ-সৌন্দর্য আর ঝরো ঝরো শব্দে সৃষ্টি হওয়া আবেশে মন ছুঁয়ে যাবে। দিনের চেয়ে রাতে এই জলপ্রপাত দেখতে বেশি ভালো লাগে। নানা রঙের আলোর ঝলকানিতে চোখ ভরে যাবে। এখানে এসে একটা ছবি বা সেলফি না তুলে ফিরে যাওয়া দর্শনার্থীর সংখ্যা খুবই নগণ্য।

জল, জলাশয় আর জলজ সবকিছুকেই প্রাধান্য দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে চিকলি ওয়াটার পার্ক। কেবল পানি নিয়েই ২০টি রাইড আছে এখানে। অন্যান্য অনেক রাইড ছাড়াও এরই মধ্যে নাইন ডি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো অত্যাধুনিক রাইডগুলো সংযোজিত হয়েছে। পার্কের ভেতরে বেশ কয়েকটি ক্যানেল আছে। সেখানকার স্বচ্ছ জলে খেলা করছে রঙিন মাছ। চাইলে স্পিড বোটেও গা ভাসাতে পারবেন এই পার্কে।

দর্শনার্থীদের আড্ডা দেওয়ার জন্য পার্কজুড়ে রয়েছে চেয়ার ও বেঞ্চের ব্যবস্থা। প্রকৃতির সঙ্গে হারিয়ে যেতে আছে গাছগাছালির সমাহার। আরও আছে চিত্তবিনোদনের জন্য স্থাপিত মিনি রেলগাড়িসহ বিভিন্ন রাইড। পার্কের পাশেই আছে রিসোর্ট। আছে আলাদা আলাদা ৫টি সিটিং এরিয়ার রেস্টুরেন্ট। আছে জেট স্কিসহ নানা ওয়াটার রাইড, আর্টিফিশিয়াল ওয়াটার ফলস, টয় ট্রেন ও বিশালাকার চরকি সব আরও নানা রাইড।

২০১৮-তে এর কাজ শুরু হলেও ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তাতেই মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। প্রতিদিনই হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর থাকে এই চিকলি ওয়াটার পার্ক। এখনো অনেক কাজ বাকি থাকলেও যা আছে, তাই দেখে মুগ্ধ বিনোদনপ্রিয় মানুষজন।

ছোট-বড় সববয়সী মানুষকে দেখা যাবে এই পার্কে। কেউবা পরিবার-পরিজনসহ, কেউবা আবার প্রিয়জনের হাত ধরে নয়তো বন্ধু-বান্ধব এক হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছেন চিকলি ওয়াটার পার্ক।

পার্কের ভেতরে কথা হয় ফাহিম মুরশেদ নামে এক কিশোরের সঙ্গে। বন্ধুরা মিলে ঘুরতে এসে মুগ্ধতার কথা শোনান এই কিশোর। ফাহিম মুরশেদ বলেন, দিনে এক রকম, রাতে আরেক রকম। এত সুন্দর পার্ক রংপুরে রয়েছে এটা হঠাৎ করে অনেকের বিশ্বাস নাও হতে পারে। আমরা প্রায়ই ঘুরতে আসি, খুব মজা হয়। 

নগরের শাপলা চত্বর থেকে ঘুরতে আসা মাসুমা আক্তার শাম্মি নামে আরেক দর্শনার্থী জানান, মাটি কেটে কিছু জায়গা নিচু করা হয়েছে। নিচেও লাইটিং ও গাছপালা দিয়ে সাজানো হয়েছে। বসার জন্যও জায়গা রয়েছে। ওপর থেকে নিচে এই সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয়।

চারদিকে আলোর ঝলকানি ও প্রচুর গাছপালা দিয়ে ঘেরা চিকলি ওয়াটার পার্ক। যেমন সুন্দর তেমনি পরিবেশবান্ধব। ছবির চেয়েও বেশি সুন্দর। আমরা ভীষণ মুগ্ধ। প্রচুর ছবি ও সেলফি তুলেছি।
 
চিকলি ওয়াটার পার্কের পরিচালক মাসুদ নবী মুন্না বলেন, এই পার্কের প্রবেশ ফি ৫০ টাকা। যেখানে অন্যান্য পার্কের প্রবেশ ফি অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে আমরা অনেক কম মূল্য নির্ধারণ করেছি। এখনো ৪০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। আমরা এটিকে শুধু রংপুর বা উত্তরবঙ্গ নয়, দেশের সেরা দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়তে চাই। চিকলি বিলের সাড়ে ৫ একর এলাকা ৩০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই