তারা মিয়ার স্ত্রী খইমালা খাতুনের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন মামুন বিশ্বাস

শেয়ামী (স্বামী) মারা যাবার পর এতিম ২ সন্তান নিয়ে খুব বিপদে আছিলাম (পড়েছিলাম)। কারণ সংসারে রোজগার করার আর কেউ নেই। কি খামু, কেডা আংগোরে পাশে দাঁড়াবে এমন চিন্তায় হা-হুতাশে পইর‌্যা গেছিলাম। এমন সময় কয়েক দিন আগে মামুন আইস্যা আমার বেটা বেটিগোর (ছেলে-মেয়ের) ছবি তুইল্যা নিয়ে গেছিলো। 

আজ (সোমবার) হে ম্যালা খাইবার ও পেরণ (পোশাক) আংগোরে নিগ্যাল (জন্য) নিয়ে আইছে। সঙ্গে নগদ ট্যাহা ও ছাগল কিন্যা দিছে। আল্লাহ মামুনের মঙ্গল করুক। এভাবেই বলছিলেন ২ এতিম সন্তানের মা খইমালা খাতুন (২৮)। 

তিনি চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান ইউনিয়নের রেহাইকাউলি চরের তারা মিয়ার স্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানসিক রোগী ছিলেন। এ অবস্থায় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। 

২৯ জানুয়ারি তারা মিয়া মারা যাওয়ার পর শাশুড়ি ও দুই সন্তানকে নিয়ে চিন্তায় পড়ছেন খইমালা। সন্তানদের মুখে এখন ঠিকমতো খাবার তুলে দিতে পারছেন না তিনি।

এমন খবর পেয়ে তরুণ সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস তাদের দুর্দশার কথা ফেসবুকে মাধ্যমে প্রচার করেন। সেটি দেখে অনেকেই অর্থ সহায়তা করেন। এতে মোট ৫৩ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়। ওই টাকায় পরিবারের সবার জন্য জামা কাপড়, ২ বস্তা চাল, ১ বস্তা ময়দা, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন খাবার নিয়ে তাদের বাড়িতে হাজির হন মামুন বিশ্বাস। পাশাপাশি বিধবা ওই মায়ের জন্য ৪টি ছাগলও কিনে যান তিনি। 

এছাড়াও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য নগদ ২৪ হাজার টাকা তুলে দেন মামুন বিশ্বাস। এসময় এনায়েতপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিক মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। 

মানবতার টানে ছুটে চলি। চেষ্টা করি ফেসবুক বন্ধুদের মাধ্যমে সমাজের জন্য ভালো কিছু করা। হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারলেই আমার ভালো লাগে। এতিম সন্তানসহ পরিবারের ৪ সদস্যের জন্য এটা সামান্য উপহার হিসেবে দিয়েছে আমার ফেসবুক বন্ধুরা। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এছাড়াও আমি বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 

মামুন বিশ্বাস, সমাজসেবক

এ বিষয়ে মৃত তারা মিয়ার স্ত্রী খইমালা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামীকে হারিয়ে দু-চোখে অন্ধকার দেখছি। মাথার ওপরের বিশাল আকাশটা যেন হঠাৎ ভেঙে পড়েছে। সন্তানদের স্বপ্ন-আশা, এক নিমিষেই সব ভেঙে চুরমার হয় গেছে। এখন আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ আর নেই। মামুন বিশ্বাসের এমন মহতি কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।

এমএএস