বরিশাল নদী বন্দরে কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) পর্যন্ত আশানুরুপ যাত্রী না হলেও শুক্রবার (১৫ জুলাই) হঠাৎ করে উপচে পড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। এতে পুরোনো চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে লঞ্চ মালিক ও স্টাফদের মাঝে। স্পেশাল সার্ভিসের মোট ১৫টি লঞ্চ এবং সরকারি সার্ভিসের একটি জাহাজ যাত্রী নিয়ে বরিশাল নদী বন্দর ত্যাগ করবে।

তবে যাত্রীদের অভিযোগ, চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তুলছে লঞ্চগুলো।

কুয়াকাট-২ লঞ্চের যাত্রী শাহিন জমাদ্দার বলেন, ঈদের ছুটির পরে বাড়তি কয়েক দিনের ছুটি নিয়েছিলাম। রোববার গিয়ে অফিস করবো। এজন্য শনিবার দিন হাতে রেখে শুক্রবার রওনা করেছি। আমার মতো অনেকেই একই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিধায় আজ এত ভিড়।

একই লঞ্চের আরেক যাত্রী সোহেল বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এত ভিড় লঞ্চে হবে কেউ ভাবেনি। আসলে বরিশালের মানুষের কাছে লঞ্চের মতো প্রিয় পরিবহন আর নেই। আমি পরিবারসহ লঞ্চে এসেছি, এখন ফিরেও যাচ্ছি। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছে এটি একটি ভোগান্তির বিষয়।

কীর্তনখোলা-২ লঞ্চের যাত্রী ব্যাংক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বলেন, লঞ্চের ভাড়া কমেনি। মাঝখানে কিছু দিন কিছুটা কমিয়েছিল। এখন আবার ডেকের ভাড়া সাড়ে তিন শ থেকে চার শ আর ডাবল কেবিন আড়াই হাজার টাকা, সিঙ্গেল কেবিন দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করছে। তিনি বলেন, আগেই অনুমান করেছিলাম শুক্রবার-শনিবার লঞ্চে চাপ বাড়বে এজন্য অগ্রিম টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। অনেকেই কিছু না পেয়ে ডেকে যাচ্ছেন।

এমভি মানামী লঞ্চের যাত্রী পোশাক শ্রমিক রোজিনা আক্তার বলেন, ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাসে গাদাগাদি করে যাওয়া যায় না। এজন্য আমরা লঞ্চে আসা-যাওয়া করি। কাল গিয়ে অফিস করবো বলে আজ লঞ্চে উঠেছি। কিন্তু কোথাও বসার জায়গা পাচ্ছি না। জায়গা না পেলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে হয়তো।

বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল নদী বন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, ওয়াটার ওয়েজ দিবা সার্ভিস এমভি গ্রীন লাইন চলে গেছে। এছাড়া ভায়াসহ ১৪টি লঞ্চ এখন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাবে। লঞ্চগুলো হচ্ছে এমভি কুয়াকাটা-২, মানামী, আওলাদ-১০, কীর্তনখোলা-২, সুন্দরবন-১০, সুন্দরবন-১১, পারাবত-১৮, সুরভী-৮, সুরভী-৯, পারাবত-৯, পারাবত-১০, এ্যাডভেঞ্চার-১, এ্যাডভেঞ্চার-৯ এবং চাঁদপুর-ফতুল্লা ভায়া লঞ্চ এমভি মানিক-১। 

তিনি জানান, বিআইডব্লিউটিএর যাত্রীবাহী সরকারি একটি জাহাজ নিয়মিত সার্ভিসে ঢাকা যাবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী রোববার পর্যন্ত এভাবে ভিড় থাকবে। রোববারের পর ভিড় কমবে।

বরিশাল সদর নৌ বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাত জামান বলেন, ঈদের আমেজ ষষ্ঠ দিনে এসে লেগেছে বরিশাল নদী বন্দরে। যাত্রী দেখে মনে হচ্ছে যৌবন ফিরেছে। মাঝখানে যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল তার লেশমাত্র নেই। 

তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করছি। কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাইনি।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর