গ্রামবাসীর উদ্যোগে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে

চন্দনা-বারাশিয়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি ছিল সাত গ্রামের বাসিন্দাদের। কিন্তু তাদের দীর্ঘদিনের এ দাবির প্রতি নজর দেননি কোনো জনপ্রতিনিধি। সরকারি দপ্তরে বার বার ধরনা দিয়েও মেলেনি সমাধান। এ অবস্থায় সম্মিলিতভাবে নিজ উদ্যোগে সেতু নির্মাণে কাজ শুরু করেছে গ্রামবাসী। 

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ‘বিলসড়াইল বটতলা’ নামক স্থানে চন্দনা-বারাশিয়া নদী ওপর এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটির ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং সাড়ে ৩ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা গ্রামবাসীর। 

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, এই সেতু নির্মাণ করা হলে ময়না ইউনিয়নের বিলসড়াইল, বান্দুগাম, ঠাকুরপুর, হাটুভাঙ্গা, মিরেরচর, কান্দাকুল ও ইচাখালিসহ সাত গ্রামের মানুষের যাতায়াত সহজ হয়। এই রাস্তা দিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা সাতৈর বাজারসহ কয়েকটি হাট-বাজারে যাতায়াত করেন। সেতু না থাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও গ্রামের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কমপক্ষে এক থেকে দেড় কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। 

সেতুটি নির্মাণ হলে ওই সাতটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ উপকৃত হবে। চন্দনা-বারাশিয়া নদী পাড়ি দিয়ে কেএফ করিম উচ্চ বিদ্যালয়, সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়, সাতৈর প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতৈর দাখিল মাদ্রাসা, সাতৈর কিন্ডারগার্ডেন, একতা একাডেমির ছাত্র-ছাত্রীরা ও সাতৈর বাজারের লোকজনসহ প্রায় সহস্রাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। বর্ষাকালে ওই জায়গায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়। 

সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেল জানায়, সেতু না থাকায় তারা ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেত। সেতুটি নির্মাণ হলে সকলেই নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে।  সাঁকো দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হতো। মাইক্রোবাস, অটোবাইক কিংবা মোটরসাইকেলে বোয়ালমারী উপজেলা সদর, ফরিদপুর শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে তাদের এক কিলোমিটার পথ ঘুরে এলানখালী-সাতৈর অথবা ময়না-বোয়ালমারী সড়ক দিয়ে যেতে হয়। 

এলাকাবাসী জানান, গত ১৫ বছর ধরে তারা চন্দনা-বারাশিয়া নদীর ওই জায়গায় একটি সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ধরনা দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমনকি স্থানীয় এমপির কাছে তারা এ সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও কয়েকবার আবেদন করেছেন উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এ কাজে সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা না পেয়ে দুই মাস আগে গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই টাকা তুলে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। 

সেতু নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা বিলসড়াইল গ্রামের শেখ হারুন-অর রশিদ বলেন, প্রায় দুই মাস আগে এ ব্যাপারে এলাকাবাসীকে নিয়ে একটি সভা করি। ওই সভায় নিজেদের টাকায় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই সভায় গ্রামের বিত্তশালীসহ সর্বস্তরের লোকদের কাছে সেতু নির্মাণের জন্য আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়। 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১০৫ জন গ্রামবাসীর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ অবস্থায় গত ২৯ জানুয়ারি থেকে সেতু নির্মাণে কাজ শুরু হয়। বালু, রড, সিমেন্ট, খোয়া দিয়ে নদীর ওপর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। সেতু নির্মাণের স্থানে মেশিনের মাধ্যমে পানি সরাতে খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা।  এখন চলছে সেতুর পিলার বা খাম্বা নির্মাণের কাজ। সেতুর জন্য মোট পাঁচ জোড়া খাম্বা নির্মাণ করা হবে। এ কাজে নিয়োজিত স্থানীয় রাজমিস্ত্রিদের প্রতি বর্গফুট বাবদ দিতে হবে ৩৫০ টাকা।
 
শেখ হারুন-অর রশিদ আরও বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য যে টাকা তোলা হয়েছে আমরা আশা করছি তাতে পিলারগুলো নির্মাণ করা সম্ভব হবে। পরবর্তীতে পাটাতন ঢালাই দেওয়ার জন্য আরও টাকার প্রয়োজন হবে। তবে আমাদের তহবিলে টাকা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইচ্ছা করলে কেউ আমাদের এ কাজে সহযোগিতা করতে পারেন। 

ময়না ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে সেতু নির্মাণের জন্য কোনো বাজেট নেই। ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব না। তবে গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে সেতু নির্মাণ করছে, এটি একটি শুভ উদ্যোগ। এ কাজে আমার কিছু করার থাকলে করবো। 

বি কে সিকদার সজল/আরএআর