সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দুর্গাবাটিতে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে ৯টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের এসব গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। চারপাশ পানিতে প্লাবিত। ডুবে গেছে পুকুর, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। তবে পানিবন্দি অবস্থায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। বেশী বিপাকে পড়েছেন নারীরা।

নদীর পানির তীব্র স্রোতের কারণে তিন দিনেও ভেঙে যাওয়া ১৫০ ফুট বেড়িবাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ৯টি গ্রামের ওপর দিয়ে চলছে নদীর জোয়ার-ভাটা। নিরাপদ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বেশী বিপাকে পড়েছেন নারীরা। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সন্ধ্যা বা রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে নারীদের। 

গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) নদীর জোয়ারের চাপে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটি এলাকার ১৫০ ফুট বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে চলে যায়। এখন পর্যন্ত ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাবাটি, পশ্চিম দুর্গাবাটি, মাদিয়া, আলপাঙ্গাসিয়া, বিলাই, কলবাড়ি, রুপোরগাতি, পূর্ব পোড়াকাটলা ও পশ্চিম পোড়াকাটলা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। 

পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের আকলিমা বেগম জানান, বাড়ির চারপাশ ডুবে গেছে। বাড়ির উঠানেও কোমর সমান পানি উঠেছে। রান্না-বান্নাও করতে পারছি না। খুব দুর্ভোগে পড়েছি। টয়লেট ডুবে গেছে। এতে প্রসাব, পায়খানারও সমস্যা। চারপাশে পানি থাকায় প্রসাব-পায়খানা করতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শুধু আমাার নয়, এমন অবস্থা এ অঞ্চলের সবার। কিছু করারও উপায় নেই। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারছি না। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বর্তমানে কলাগাছের ভেলা এবং নৌকা দিয়ে বাড়িতে যাতায়াত করছেন অনেকেই। চলাচলের রাস্তা ডুবে গেছে। বাড়িঘরে পানি থাকায় রান্না করতে না পারায় অনেকে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন। 

পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চারদিক পানিতে ডুবে আছে। কলাগাছের ভেলায় করে চলাফেরা করতে হচ্ছে। চারদিকে পানি থাকলেও কোথাও খাওয়ার পানি নেই। গোসল করতে হচ্ছে নোংরা ও লবণাক্ত পানিতে। যেই পানিতে পায়খানা-প্রসাব আবার সেই পানিতেই গোসল করতে হচ্ছে। বেশিদিন এভাবে চললে এলাকায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দেবে। 

এদিকে নদী ভাঙন এলাকায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিনামূল্যে সুপেয় পানি পৌঁছে দিতে কাজ করছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিইও ইয়ুথ টিম। 

সংগঠনটির আহ্বায়ক ফজলুল হক বলেন, নদী ও বাঁধ ভাঙনের কারণে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে অসংখ্য মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। খাদ্যের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা সাধ্যমত দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করছি। 

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় এখন পর্যন্ত ৯টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে দুর্গত এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পয়ঃনিষ্কাশনেরও সমস্যা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্তা, দড়ি, বাঁশ ও পেরেকসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ৬০০ ফুট এলাকায় পাইলিং করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে তীব্র জোয়ারের কারণে ভাঙনের স্থানে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার বলেন, এ ধরনের বিপর্যয় ইতোপূর্বে কখনো আমরা দেখিনি। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য। মানুষ খুব দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর সমাধান হবে।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ হুসাইন শাফায়াত বলেন, উপকূলীয় এ অঞ্চলটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। সেখানে আমাদের মেডিকেল টিম সব সময় প্রস্তুত থাকে। এখনো প্রস্তুত রয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ওষুধপত্র রয়েছে। স্বাস্থ্যগত যে কোনো সমস্যায় আমাদের মেডিকেল টিমের সদস্যদের জানালে তারা তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

তিনি বলেন, যেহেতু সেখানকার গোটা এলাকা প্লাবিত, সেকারণে দুর্গত এসব মানুষদের স্বাস্থ্যগত নানা ঝুঁকি রয়েছে। পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। আমাদের জানালে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

আকরামুল ইসলাম/আরএআর