বাড়ির চারপাশে ক্যাকটাস গাছ লাগিয়েছেন খাগড়াছড়ির মহালছড়ির বাবুরাম মারমা

বাড়িকে সুরক্ষিত রাখতে কে না চায়? আর এর জন্য দেয়াল অপরিহার্য। সেই দেয়াল যদি হয় ক্যাকটাস গাছ দিয়ে তাহলে তো কোনো কথায় নেই। ক্যাকটাস গাছ বাড়ির চারপাশকে দৃষ্টিনন্দ্ন করার পাশাপাশি যেমন সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় তেমনি চোর ডাকাতের হাত থেকে বাড়িকে রক্ষা করে। 

এমনই এক ব্যতিক্রমী দেয়াল নির্মাণ করেছেন খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি ইউপির কাপ্তাই পাড়া এলাকার বাবুরাম মারমা। তার বাড়ির এমন দৃশ্য চোখ জুড়ায় রাস্তা দিয়ে চলাচল করা প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের। তিনি বাড়ির চারপাশে সবুজ ক্যাকটাস গাছ লাগিয়ে বাউন্ডারি দেয়ালের কাজ শেষ করেছেন।

জানা গেছে, ক্যাকটাস চাষের জন্য মাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মাটি অন্যান্য গাছের তুলনায় একেবারেই আলাদা। পারলাইট মাটি বা দোআশঁ মাটির মিশ্রণ এক্ষেত্রে ভালো। ক্যাকটাসের চারা বা বীজ বপনের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে এপ্রিল-মে মাসে বীজ বপন করলে ভাল হয়।

ক্যাকটাস চাষের জন্য পরিমাণমতো পানি দেওয়া খুবই দরকারি। কম পানি দিলে ক্যাকটাসের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। আবার বেশি পানি দিলে মূল পচে গাছ মারা যেতে পারে। পানির পরিমাণ ও প্রয়োগ বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হয়। তাছাড়া এটি ক্যাকটাসের জাতের ওপরও নির্ভর করে। শীতকালে ক্যাকটাসে পানি দেওয়ার তেমন দরকার হয় না। তবে যদি মূল শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে মাসে ১-২ বার পানি দেওয়া যেতে পারে। বছরের অন্যান্য সময় সপ্তাহে একবার পানি দিতে হবে।

ক্যাকটাসের দেয়াল

ক্যাকটাস গাছের তেমন কোনো রোগ বালাই হয় না। তবে অতিরিক্ত পানি দিলে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। ফলে গাছটি পঁচে মারা যেতে পারে। এজন্য গাছে পরিমাণের বেশি পানি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সামান্য পরিমাণ ছত্রাকনাশক গুলে সমস্ত গাছে স্প্রে করা যেতে পারে।

বাড়ির আঙিনায় ১৮/২০ বছর আগে এই ক্যাকটাস গাছ লাগিয়েছি। এগুলো এখন অনেক বড় হয়েছে। এই গাছের কারণে এখন আমার বাড়িতে বাউন্ডারি ওয়াল দিতে হচ্ছে না। এগুলো অনেক বড় হয়েছে যার ফলে বাইরে থেকে ভিতরে কিছু দেখা যায় না। এতে করে বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ছে এবং দেয়ালের কাজও করছে।

বাবুরাম মারমা

বাবুরামের স্ত্রী রামবাই মারমা বলেন, আমার বিয়ের পর এই বাড়ি বানিয়েছি। এরপর এক জায়গা থেকে এই গাছগুলোর বীজ এনে বাড়ির চারপাশে লাগিয়েছি। এখন অনেক বড় হয়েছে গাছগুলো। আমাদের বাড়ির চারপাশ ঢেকে গেছে ক্যাকটাস গাছে। এখন বাড়ির যেদিকে তাকাই গাছগুলো দেখতে পাই। অনেক সুন্দর লাগে চারপাশ।

থৈয়ংরী মারমা বলেন, আমি ছোট থেকেই দেখছি এই ক্যাকটাস গাছগুলো। আস্তে আস্তে এগুলো অনেক বড় হচ্ছে। আমার বাবা এই গাছগুলো অনেক আগে লাগিয়েছিল। এখন এই ক্যাকটাস আমাদের বাড়ির চারপাশের সৌন্দর্য রক্ষার পাশাপাশি বাউন্ডারি দেয়ালের কাজে লেগেছে। এই গাছগুলো মূল সড়কের পাশে হওয়ায় মানুষ যাতায়াতের সময় এগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।

সড়কে ঘুরতে যাওয়া নাছির উদ্দিন বলেন, আমি এই প্রথম এ গ্রামে ঘুরতে এসেছি। আমার কাছে মনে হলো বাংলাদেশে এমন বড় ক্যাকটাস আর কোথাও নাই। এগুলো যে দেখবে তারই মন কেড়ে নেবে। এই গাছগুলো কোনো যত্ন ছাড়াই এখন পড়ে আছে। যদি সময় দিয়ে এগুলোকে পরিচর্যা করা হয় তাহলে এই ক্যাকটাসগুলোর সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ হবে।

জাফর সবুজ/এসপি