অবশেষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি পুকুরের মাছ ৫২ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে উপজেলার চাকামইয়া ইউপির গামরবুনিয়া আশ্রয়ণ কেন্দ্রের পুকুর থেকে ধরা মাছ এসব মাছ বিতরণ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবুবক্কর সিদ্দিকী।

জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চাকামাইয়া ইউনিয়নের পূর্ব চাকামাইয়া গ্রামে আট একর জমির ওপর ১০০ হতদরিদ্র মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে সরকার। আর এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মধ্যে তিন একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয় পুকুর। এ পুকুরে সরকার প্রতিবছর মাছ চাষ করত। কিন্তু এসব মাছ ধরে নিয়ে যেত স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বঞ্চিত হতো আবাসনে বসবাসকারী ১০০ পরিবার।

সর্বশেষ গত ২৬ রমজান চাকামাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর ফকিরের নেতৃত্বে এ পুকুরের মাছ ধরে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে মাছ ধরা নিয়ে আবাসনের বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানান। বিষয়টি নিয়ে গত ২২ জুন আবাসনে প্রবেশ করে কহিনুর (৩৭) নামের এক নারীকে চেয়ারম্যানের নির্দেশে মারধর করেন আলম, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মহসিন ও আলমগীর আকন, এমন ঘটনায় ওই দিনই ওই নারী বাদী হয়ে কলাপাড়া থানায় একটি অভিযোগ করেন।

পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে পুকুর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৮ মণ মাছ ধরা হয়। এ সময় এসব মাছ আবাসনে বসবাসকারীদের মাঝে বণ্টন করা হয়। দীর্ঘদিন পর এ পুকুরের মাছ পেয়ে হাসি ফুটেছে আবাসনের বাসিন্দাদের মাঝে। মাছ বণ্টনের এমন কাজকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।

মাছ বিতরণের সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বক্কর সিদ্দীকি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কলাপাড়া থানা পুলিশের সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নির্যাতিত কহিনুর বেগম বলেন, চেয়ারম্যানে পুকুর থেকে সব মাছ ধরে নিয়ে গেছে। পরে ফের মাছ ধরার জন্য পুকুরের পানি নামিয়ে ফেলে। এতে আমাদের পানি ব্যবহার করতে অনেক বেকাদায় পড়তে হয়। আমরা এর প্রতিবাদ করলে আমাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। এখন মামলার আসামিরা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি জীবননাশের হুমকিতে রয়েছি। চেয়ারম্যানেও মুঠোফোনে আমাকে হুমকি দিয়েছে।

অপর বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ উপজেলা প্রশাসন রুই, কাতল, মৃগেল ও চিংড়িসহ এই পুকুরের ১০ প্রজাতির মাছ আমাদের সমহারে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা অনেক খুশি। এর আগে আমরা মাছ পাইনি। প্রশানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব মরিয়ম বেগম জানান, গত রমজান মাসে ইউপি চেয়ারম্যান পুকুরের বড় বড় মাছ ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের প্রত্যেক পরিবার থেকে ৩৫০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। তাদের কিছু ছোট মাছ দিয়েছে। এতে তিনি অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

চাকামাইয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মজিবর ফকির বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বক্বর সিদ্দীকি জানান, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবকিছু আশ্রয়ণের বাসিন্দারা ভোগ করবে। কিন্তু আবাসনের বাসিন্দা কোহিনুর নামের এক নারীকে মারধর করা হয় এবং চেয়াম্যানের নেতৃত্বে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ নিয়ে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আজ মাছ ধরে স্থানীয় বাসিন্দারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

কাজী সাঈদ/এনএ