স্বাভাবিকভাবেই চলছিল স্বামীর সংসার। প্রথম সন্তান মৃত্যুর পরও স্বাভাবিক ছিলেন রুমা বেগম। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তান প্রসবের পরই শুরু করেন অস্বাভাবিক আচরণ। কিছুদিন চিকিৎসা করে শেষে রুমার বাবারবাড়িতে রেখে যান স্বামী। এরপর তার জীবনে কেটে যায় শিকলবন্দী বারোটি বছর।

বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের চেগুটিয়া গ্রামের দিনমজুর মজিবর হাওলাদাদের সামর্থ্য নেই ভারসাম্যহীন মেয়ে রুমার চিকিৎসা করার। তাই উপায়ান্তর না পেয়ে শিকলে বেঁধে রেখেছেন। ফলে মৃত্যু ছাড়া এই অস্বাভাবিক জীবনের মুক্তি নেই রুমা বেগমের কাছে।

রুমা কাউকে দেখলে শিকল ছাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেন। যেতে চান নিজের সন্তানের কাছেও। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে মেয়ের আবদার রাখতে পারেন না মজিবুর রহমান।

রুমার বাবা জানান, রুমাকে রেখে তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুবরণ করলে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎমায়ের সংসারে বড় হন রুমা। ১৪ বছর বয়সে গৌরনদী উপজেলার বাঘমারা গ্রামের সেকেন্দার হাওলাদারের ছেলে সেলিম হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে দেন তাকে। তাদের ঘরে জন্ম নেয় প্রথম সন্তান। কিন্তু জন্মসংক্রান্ত জটিলতায় সেই সন্তানের মৃত্যু হয়। বছরখানেক পর দ্বিতীয় সন্তান জন্ম হলেও তত দিনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রুমা।

রুমাকে তার স্বামী সেলিম হাওলাদার চিকিৎসক দেখিয়ে সুস্থ করতে না পেরে শ্বশুরবাড়িতে মানে রুমার বাবা মজিবর হাওলাদারের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেই থেকে বাবার বাড়িতে একটি পরিত্যক্ত ঘরে ১২ বছর শিকলবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।

রুমার সৎমা সালেহা বেগম জানান, এখন পর্যন্ত তিনবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। যত অসুস্থ হোক, সে তো আমাদের সন্তান। আমরা রুমাকে হারাতে চাই না। এ জন্য সাধ্যমতো চিকিৎসা চালাই। তবে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে শিকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে।

মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেউই চায় না তার সন্তান চোখের সামনে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে যাক। কিন্তু আমার সামর্থ্য না থাকায় রুমাকে এখন চিকিৎসা ছাড়াই আটকে রাখতে হয়েছে। আমার বিশ্বাস চিকিৎসা করাতে পারলে সে সুস্থ হয়ে উঠত।

তিনি আরও বলেন, অনেকের ধরনা ধরেছি। সবাই ‘পাগল ভালো হবে না’ বলে নিরাশ করেছে। যখন মানুষ এসব বলে, তখন মনে চায় নিজে মরে যাই।

এনএ