পাহাড়ি ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে পর্যটকরা খোঁজেন নিসর্গ

বান্দরবান এলেই আঁকাবাঁকা রাস্তার পাশেই দেখা মিলবে অসংখ্য ঝরনার। পাহাড়ের বুক বেয়ে চলেছে এসব ঝরনার শীতল পানি। ঝরনার স্বচ্ছ  পানিতে গা ভাসাতে পর্যটকরা বেচে নিচ্ছেন এই বর্ষার সময়কে। চারপাশের সবুজ প্রকৃতি আর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেবে অনেকটা।

বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি যাবেন যেভাবে
• বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি ঘণ্টায় ছাড়ে, বাস টিকিট জনপ্রতি ৬০ টাকা
• চাঁদের গাড়ি (বি-সেভেন্টি) রিজার্ভ আসা-যাওয়া প্রতি গাড়ি ২০০০ টাকা
• সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ প্রতি গাড়ি ৫০০-৬০০ টাকা

রুমার রিজুক ঝরনা আর থানচির অমিয়াখুম, নাফাকুম ভ্রমণে খুব পরিচিতি পেলেও এখন বান্দরবান সদর থেকে সবচেয়ে কাছে রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবান্ধা, শামুকঝিরি, দেবতাখুমসহ কয়েকটি ঝরনা দেখা মেলে। অভিযানপ্রিয় পর্যটকদের কাছে দুর্গম এই ঝরনাগুলো খুবই আকর্ষণীয়।

ছাঃলাওয়া (শীলবান্ধা)
রোয়াংছড়ি থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার (কিমি) দূরে অবস্থিত। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় প্রতিজন ৬০ টাকা। চাঁদের গাড়িতে (বি-সেভেন্টি) রিজার্ভ কচ্ছপতলী পর্যন্ত যেতে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। কচ্ছপতলী থেকে প্রায় তিন কিমি কাঁচা রাস্তা হেঁটে, উঁচুনিচু পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবেন প্রকৃতির নীলিমা ছাঃলাওয়া (শীলবান্ধা)। পাহাড়ের গা ঘেঁষে দেখতে পাবেন পাহাড়িদের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস জুম চাষ। উজান থেকে বয়ে আসা সাঙ্গু নদী। সঙ্গে মিশে যাওয়া আঁকাবাঁকা রোয়াংছড়ি নদী। আরও দেখবেন সেই নদীতে আদিবাসী নারীদের দল বেঁধে মাছ ধরার দৃশ্য। সামনে যেতে যেতে দেখা মিলবে শত ফুট উঁচু ঝরনা এবং গভীর দেবতাকুম। দেবতাকুমে যেতে বাঁশের ভেলা ব্যবহার করতে হয়।

সাঙ্গু নদীতে পর্যটকরা

স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইডরা জানান, যারা সাঁতার জানেন না, তাদের জন্য লাইফ জ্যাকেট প্রয়োজন হয়। বর্ষায় ঝরনা এলাকায় প্রচুর পানি থাকে। এ সময় পরিপূর্ণ সৌন্দর্য দর্শন করা যায় এখানে। এ জন্য ঝুঁকি থাকে বেশি। আর দেবতাকুমে প্রতিমুহূর্ত পানি থাকে।

ক্যাঃসিখ্যং
রোয়াংছড়ি থেকে দুই কিমি হেঁটে পৌঁছে যাবেন ক্যাঃসিখ্যং ঝিরিতে। পথে পাবেন পাথরের নুড়ি। এখানে রয়েছে অনেক ছোট ঝরনা। আছে পাহাড়ঘেরা শান্ত পরিবেশ, মৃদু হাওয়া ও পাথরবেষ্টিত গুহা।

ম্রঙওয়া কুম
রোয়াংছড়ি থেকে প্রায় আট কিমি হেঁটে যেতে হয়। আঁকাবাঁকা ও উঁচুনিচু পাহাড়ি কাঁচা রাস্তা দিয়ে গেলেই পাবেন ম্রঙওয়া পাড়ায়। ম্রঙওয়া পাড়া থেকে ২০ মিনিট হাঁটলে দেখা মিলবে ম্রঙওয়া কুম। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা কুমটি। এটি পার হতে হয় বাঁশের ভেলা দিয়ে। এ ক্ষেত্রে সাঁতার জানা থাকতে হয়। অন্যদের ক্ষেত্রে লাইফ জ্যাকেট লাগবে। কুমটি পার হতে থাকবে জলপ্রপাতের দৃশ্য।

শামুকঝিরি দেবতাকুম
শামুকঝিরি দেবতাকুমে যেতে হলে রোয়াংছড়ির কচ্ছপতলী থেকে প্রায় চার কিমি কাঁচা রাস্তা হাঁটতে হবে। এ সময় পথে দেখা যাবে গ্রামীণ আদিবাসীদের জীবনবৈচিত্র্য ও মাচাংঘর। আরও দেখা মিলবে হরিণের পুরোনো গুহা। যেখানে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া লবণ। যে লবণ আগে হরিণরা থাকাকালীন খেত। এরপর তারাছা নদী ও বড় বড় পাথরের ঝিরি পাড়ি দিলে দেখা মিলবে শামুকঝিরি দেবতাকুম। যার দুপাশে রয়েছে সবুজে ঘেরা উঁচু পর্বত ও স্নিগ্ধ বাতাস।

আঁকাবাঁকা রোয়াংছড়ি নদী

রোয়ংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল্যাহ আল জাবেদ পর্যটন এলাকা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো পর্যটক নিরাপত্তাহীনতার কথা অভিযোগ করেননি। সে পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

উপজেলা বাজার প্রধান সড়ক মোড়ে ট্যুরিস্ট তথ্যসেবা ও ট্যুরিস্টদের সহায়তা করার জন্য পুলিশের সেবা কেন্দ্র থাকবে। উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রে ট্যুরিস্টদের যেকোনো পর্যটন এলাকায় যাওয়ার আবেদন থাকবে। যেসব জায়গায় পর্যটন এলাকা রয়েছে, বিশেষ করে ছালাওয়া (শীলবান্ধা) দেবতাকুমে পর্যটকদের সুবিধার্থে ঘর নির্মাণ করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। যেখানে পর্যটকদের বিশেষ কক্ষ (নারী ও পুরুষ) ও টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে সময় লাগে বাসযোগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। এরপর বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি যেতে প্রায় ১৯ কিমি আঁকাবাঁকা ও উঁচুনিচু পাহাড়ি পথ। পথে রয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ছোট ছোট কয়েকটি গ্রাম। তাদের জুমচাষের পদ্ধতি এবং মাচাংঘর।

রোয়াংছড়িতে কোথায় থাকবেন
১. রামাজন আবাসিক হোটেল প্রতি রাত (তিনজনের সিট) ৩৬০ টাকা
২. রাধামন আবাসিক হোটেল প্রতি রাত ডবল সিট ৫০০ টাকা

যেখানে খাবেন
রোয়াংছড়িতে মানসম্মত খাওয়ার অনেক রেস্টুরেন্ট আছে। এসব রেস্টুরেন্টে সাধারণ খাবারের পাশাপাশি স্থানীয় তৈরি নানা রকম খাবার পাওয়া যায়। এ ছাড়া পর্যটন এলাকাগুলোয় স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের বাড়িতে খাওয়া যায় অথবা খাবার সংগ্রহ করে নিজেরাও তৈরি করে খাওয়া যায়।

এনএ