ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে বিদ্যালয়ের জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ নেতার একটিসহ ১৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির।

চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের চর হাজীগঞ্জ বাজার-সংলগ্ন চর হাজীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গড়ে উঠেছিল এসব অবৈধ স্থাপনা।

দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন চর সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আহসানুল হক মামুন (৪৯)। তার সেমিপাকা একটি টিনের ঘর ছিল। এ ছাড়া ওই ইউনিয়নের বাঞ্ছারাম বিশ্বাসের ডাঙ্গী গ্রামের আব্দুল মান্নান শেখ (৫৯) ও তার শরিকদের ৯টি টিনের ছাপরা ঘর ও আবদুস ছাত্তার মোল্লার চারটি টিনের ঘর ছিল।

চর হাজীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আযাদ আবুল কালাম বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে ৫০ শতাংশ জায়গায় ৬০টি স্থাপনা তুলে ব্যবসা করে আসছিল ওই দখলদাররা। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অনেকবার তাদের অনুরোধ করা হয়ছিল। কিন্তু তারা জায়গা ছাড়ছিলেন না। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চার দফা মাইকিং করে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। ৪৬টি ঘর স্বেচ্ছায় সরিয়ে নেয় দখলদাররা। বাকি দখলদারদের স্থাপনা আজ উচ্ছেদ করা হয়েছে।

তবে অবৈধ দখলদার মান্নান শেখ দাবি করে বলেন, যে জায়গায় আমার শরিকদের ঘরগুলো ছিল, সে জায়গা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। এ নিয়ে আদালতে মামলাও রয়েছে। কিন্তু আদালতের মামলা উপেক্ষা করে আমার ও শরিকদের ঘরগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

চর হাজীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও চর হাজীগঞ্জ হাটবাজার বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি কবিরুল আলম বলেন, যেসব জায়গায় উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা আগে বিদ্যালয়ের দখলেই ছিল। মান্নানদের জায়গা রয়েছে তবে তা উদ্ধারকৃত জায়গায় না।

এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আহসানুল হক বলেন, চূড়ান্ত নোটিশ পেয়ে আমি মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) স্বেচ্ছায় ঘর সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত আমাকে সে সময়টুকু পর্যন্ত দেয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির বলেন, মামলা-সংক্রান্ত বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ছাত্র শিক্ষক ও এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিদ্যালয়ের জায়গাসহ বিদ্যালয়ের পুরোনো শহীদ মিনারটি দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা। তাদের বারবার সময় দেওয়া হয়েছে। অনেকেই স্বেচ্ছায় সরিয়েছে। যারা দখল করে আছে, আজ তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ সালে ১ একর ৯৫ শতাংশ জায়গা নিয়ে স্থাপিত হয় চর হাজীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়টি। ২০০১ সালে বিদ্যালয়টি নদীভাঙনের শিকার হয়। পরে বিদ্যালয়ের মাঠে অস্থায়ীভাবে টিনের দোচালা ঘর তুলে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে থাকে। ২০০৪ সালে আগের জায়গা থেকে প্রায় এক কিলোমিলার দূরে চর অমরাপুর গ্রামে ১ একর ৩২ শতাংশ জায়গার ওপর বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকেই মাঠটি বেদখল হতে থাকে।

জহির হোসেন/এনএ