সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা এক সপ্তাহ আগে শেষ হয়েছে। অথচ এখনো ভোলার জেলেরা তাদের প্রণোদনার চাল পাননি। তারা কবে নাগাদ চাল পাবেন সে ব্যাপারে খোদ মৎস্য বিভাগও কিছু বলতে পারছে না। আদৌ পাবেন কিনা সে বিষয়েও সংশয় রয়েছে জেলেদের।

শুধু ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা নয়, ইলিশের প্রজনন মৌসুমসহ সবকটি নিষেধাজ্ঞায়ই ভোলায় জেলেদের চাল নিয়ে চালবাজির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে।এ অবস্থার অবসান চান জেলেরা। 

গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় দুর্দিন যাচ্ছিল ভোলার সমুদ্রগামী জেলেদের। এই দীর্ঘ সময় ধরে ধার-দেনা করে সংসার চালানো ছিল তাদের কাছে বড় কষ্টের বিষয়। এ সময় জেলেদের জন্য সহায়তা হিসেবে জনপ্রতি ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ ছিল। প্রথম কিস্তিতে ৫৬ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা পেরিয়ে গেলেও এখনো দ্বিতীয় কিস্তির ৩০ কেজি চাল পাননি তারা। কবে নাগাদ পাবেন সে বিষয়েও কোনো ধারণা নেই জেলেদের।

ভোলার দৌলতখান ঘাটের সাগরগামী জেলে রুহুল আমিন বলেন, সরকার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। আমরা জেলেরা আজ পর্যন্ত কোনো কিছুই পাইনি। আমরা শুনি চাল ও অন্যান্য কিছু জেলেদের জন্য আসে, কিন্তু আমরা কোনো কিছুই পাই না।

জেলে মো. খায়রুল বলেন, কিছু দিন পর পর সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়, আমরা সেই নিষেধাজ্ঞা মানি। কিন্তু সরকার যে চাল আমাদেরকে দেয়, আমরা সেই চাল কখনোই ঠিকমতো পাই না। এমনকি এবারের এই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার চালও আমরা পাইনি। সব সময় শুধু আশাই দেয়, কিন্তু কিছুই দেয় না।

জাকির মাঝি বলেন, অভিযানের মধ্যে ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা ছিল। আমি ৫৬ কেজি পেয়েছি। অভিযান শেষ হয়ে গেছে। বাকি চাল কবে পাবো সেটা এখনো জানি না। তবে সেই চাল দ্রুত পেলে খুব ভালো হতো। আমরা এখন অনেক কষ্টে আছি।

শুধু ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা নয়, অন্যান্য নিষেধাজ্ঞায়ও জেলেরা সঠিক সময়ে সঠিকভাবে চাল পান না বলে অভিযোগ মৎস্যজীবী সমিতির নেতাদের। ভোলার ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ জানান, তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নির্ধারিত সময়ে চাল বিতরণের জন্য সব সময়ই দাবি করেন।

চাল বিতরণে অনিয়ম এবং ধীরগতির কথা স্বীকার করে ভোলার দৌলতখানের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হাসনাইন বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার জন্য ভোলার জেলেদের মাঝে ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১ হাজার ৯২০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে। চালগুলো মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ আসে। শিগগিরই যাতে জেলেরা চাল পান, সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই চাল বিতরণ করা সম্ভব হবে।

জেলায় ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৮৩ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জেলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯৫৪ জন।

আরএআর