এমন দিন আসবে কখনো ভাবিনি। একজন বাবার কাছে সন্তানের লাশের চেয়ে ভারী আর কোনো জিনিস পৃথিবীতে নেই। আজ আমার নিষ্পাপ কলিজাটাকে নিজ হাতে কবরে রেখে আসলাম। একটা উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি, কী অপরাধ ছিল আমার শিশুটার? এর উত্তর কেউ দিতে পারবেন? আমার কাঁধে যখন খাটিয়াটা নিই, সেটা যেন পাহাড়ের সমান ভারী ছিল আমার কাঁধে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। 

নিহত সুরাইয়ার জানাজা ও দাফনকার্য শেষ করে বাসায় এসে এসব কথা বলেন তার বাবা বাদশাহ মিয়া। 

ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈলের বাচোর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে  নির্বাচনী সহিংসতায় পুলিশের গুলিতে আট মাস বয়সী সুরাইয়া আক্তার মারা যায়। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মীরডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষ হয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়। 

সুরাইয়ার বাবা আরও বলেন, আমি চায় আর কেউ যাতে কোনো বিপদে না পড়ে। আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। আমাদের পরিবার ও আত্নীয় স্বজনরা ভয়ে আছেন। আমরা এর মীমাংসা চায়। আমাদেরকে আর যাতে কোনোভাবেই বিপদে না ফেলা হয়। 

নিহত সুরাইয়ার চাচা মাসুম পারভেজ বলেন, আমাকে গতকাল এমপি, ডিসি, এসপি স্যার ডেকেছিলেন। তারা আমাদের ধৈর্য্য ধারণ করতে বলেছেন। আর বিচারের জন্য তারা তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন। খুব তাড়াতাড়ি তারা এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 

নিহত সুরাইয়ার মা মিনারা বেগম বলেন, আমার সম্পদ হারিয়ে গেল। আর যেন আমাদের কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি। আর যাতে হয়রানির শিকার হতে হয় আমাদের। 

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরের পর দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এর সুষ্ঠু বিচারের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রামকৃষ্ণ বর্ম্মন, জেলা নির্বাচন অফিসার সফিকুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পীরগঞ্জ সার্কেল) আহসান হাবিব কমিটিতে রয়েছন। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এম এ সামাদ/আরআই