বাংলা দিনপঞ্জিকার হিসাবে এখন শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। এ সময় প্রকৃতিতে থাকার কথা ভরা বর্ষাকাল। কিন্তু এ মৌসুমেও মিলছে না বৃষ্টির দেখা। আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকলেও একপশলা বৃষ্টির দেখা নেই। তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নীলফামারী জেলার আমন চাষিরা।

আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ থেকে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা পাচ্ছেন না কৃষকরা। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় সেচযন্ত্র ব্যবহার করে আমন চারা রোপণ করছেন নীলফামারীর কৃষকরা। ফলে আবাদে খরচ বৃদ্ধি ও উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, চারা রোপণের এখনো সময় আছে অন্তত ১৫ দিন। এ জন্য তারা বিকল্প উপায়ে আমন চারা রোপণের পরামর্শ দিয়েছে কৃষকদের।

সরেজমিনে সদর উপজেলার টুপামারী, খোকশাবাড়ি ও ইটাখোলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, আমন চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। কোথাও জমি তৈরি, কোথাও সেচ দেওয়া, কোথাও চারা রোপণ আবার কোথাও বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করা হচ্ছে। বৃষ্টির আশায় না থেকে সেচযন্ত্র ব্যবহার করে আমন চাষাবাদে নেমে পড়েছেন কৃষকরা।

ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই এলাকার কৃষক জগন্নাথ বর্মণ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০ বিঘা জমিতে চারা লাগানোর কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে পাঁচ বিঘা জমিতে লাগানো হয়েছে। বর্ষার ভরা মৌসুম এখন, পানিতে ভরপুর থাকার কথা জমি জায়গা। অথচ আকাশে বৃষ্টি নেই। চারা রোপণ আরও আগে করা দরকার ছিল। কারণ, এরপর আলু করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় জমি শুকনো অবস্থায় পড়ে ছিল। বাধ্য হয়ে বাড়তি খরচ করে সেচযন্ত্র ব্যবহার করে সেচ দিতে হচ্ছে জমিতে।

একই এলাকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, সাত বিঘা জমিতে আমনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আর অপেক্ষা করা যায় না বৃষ্টির জন্য। শ্যালো মেশিন ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে চারা রোপণের জন্য। কারণ, বিদ্যুৎ এই আসে, এই যায়। সে কারণে সেচ দেওয়া ব্যাহত হবে, এ কারণে শ্যালো মেশিনে সেচ ব্যবহার করছি। আমনে খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। বিঘাপ্রতি ১০ হাজারের মতো ব্যয় হবে বলে জানান তিনি।

১০ জনের দল নিয়ে চারা রোপণ করছেন আফজাল ও আমিনুর। তারা বলেন, বৃষ্টির পানি না থাকায় জমিগুলোতে পর্যাপ্ত পানি দেওয়া যাচ্ছে না। সেচযন্ত্রের পানিতেও ঘাটতি মনে হয়। এক দিন পরেই এই পানি শুকিয়ে যাবে। বিঘাপ্রতি আমরা এক হাজার করে নিচ্ছি। প্রতিদিন আমরা সাত-আট বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে পারি।

পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কলোনীপাড়ার মমিনুর রহমান বলেন, প্রতিবছর ১০ বিঘা জমিতে আমন রোপণ করি। কিন্তু এবার বৃষ্টি নেই, প্রচণ্ড গরম। তাই বৈদ্যুতিক মোটরে সেচ দিয়ে আমন রোপণ করছি। তীব্র দাবদাহের কারণে কৃষিশ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আমন রোপণ করতে হচ্ছে। এবার আমন চাষে লোকসান গুনতে হবে।

একই এলাকার কৃষক রুবেল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমনের চারা রোপণ করতে পারিনি। জমিগুলো রোদে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আমি এক বিঘা জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার ১ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করেছেন কৃষকরা। জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চারা রোপণ শুরু হয়েছে, যা আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চারা রোপণে ব্যাঘাত ঘটছে। মূলত আমন চারা রোপণ হয় আকাশের বৃষ্টির পানির ওপরই। এখনো সময় রয়েছে বৃষ্টি হওয়ার। তবে বিকল্প উপায়ে আমন চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের।

এনএ