সভাপতি আসলাম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান শুভ

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি হয়েছেন আসলাম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান শুভকে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, দুজনেই বিবাহিত। এ ছাড়া গঠিত কমিটিতে স্থান পেয়েছে অছাত্র, মাদকসেবী ও বিতর্কিতরা। এ নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর গ ধারায় আছে, বিবাহিত ব্যক্তি ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাবেন না। এরপরও মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন বিবাহিতরা। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের ৬৮ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষিত হয়। কমিটির মেয়াদ দেওয়া হয়েছে এক বছর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবগঠিত মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি আসলাম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান শুভ বিবাহিত। আসলামের স্ত্রীর নাম সাদিয়া খাতুন এবং শুভর স্ত্রীর নাম মাহফুজা আক্তার।

এ ছাড়া কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে সাতজনের ওপরে বিবাহিত নেতা-কর্মী রয়েছেন। কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে বয়স বেশি, অছাত্ররা জায়গা পেয়েছেন।

গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে কমিটিতে স্থান দেওয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। জেলা ছাত্রলীগ, মিরপুর ও কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিতদের নাম আসায় বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ও পদবঞ্চিত ছাত্রের অভিযোগ, বিবাহিত আসলাম উদ্দিনকে সভাপতি ও বিবাহিত আশিকুর রহমান শুভকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এ ছাড়া অছাত্র, মাদকসেবী ও বিতর্কিতদেরও নাম এসেছে কমিটিতে। অবৈধভাবে সুবিধা নিয়ে বিতর্কিত ও অযোগ্যদের পদ দিয়েছেন অনিক-চ্যালেঞ্জ। এভাবে সংগঠন চলে না।

এ ছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ এর বিরুদ্ধে ‘কমিটি বাণিজ্যের’ অভিযোগ জানিয়েছেন তারা।

দীর্ঘদিন মিরপুর উপজেলায় ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেও কাঙিক্ষত পদ না পাওয়ায় রাতেই নিজ ফেসবুকে স্বেচ্ছায় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগও করেছেন ছাত্রলীগ নেতা রানা আহমেদ। তিনি জানান, নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত। তাদের দুজনের বিয়ের কাবিননামা নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও তা পাওয়া যাচ্ছে।

রানা আরও বলেন, খোঁজ নিলে এই কমিটির অনেকের বিয়ের কাবিননামা পাওয়া যাবে। তার দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রলীগ করে আসছি। আগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। নতুন কমিটির ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে মাদকসেবী, অছাত্রও রয়েছে। তাই এদের সঙ্গে আমি নোংরা পলিটিক্স করব না বলেই স্বেচ্ছায় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নবগঠিত মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি আসলাম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।

তবে সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে নিয়ে কে বা কারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি বিবাহিত না। বিয়ের ব্যাপারটা অনেক আগে থেকেই তোলা হয়েছে। জেলার নেতারা তদন্ত করেই আমাকে সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণ সম্পাদক শুভ ও সভাপতি আসলাম বিবাহিত কি না, সেসব তথ্য আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অছাত্র ও মাদকসেবী নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।

কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দীন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিটিতে বিবাহিতরা আছে কি না, সেই ব্যাপারটি যারা কমিটি গঠন করেছে, তারাই ভালো জানেন। তবে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজু আহমেদ/এনএ