সিরাজগঞ্জ সদরের বহুলী ইউনিয়নের খাগা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণের কয়েকটি গাছ নিয়ম না মেনেই কাটা হয়েছে। প্রায় ২০ বছর বয়সী লক্ষাধিক টাকার এসব গাছ কেটেছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।

শুধু তা-ই নয়, গাছ কাটার জন্য ভেঙে ফেলা হচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আঞ্চলিক সড়কের পাশের অংশও।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি টি এম মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় এ নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না কেউ।

যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাছ কাটতে হলে সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। যে কমিটির সভাপতি হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদস্যসচিব থাকেন বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ।

রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে খাগা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে গেলে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় স্থানীয়রা বলেন, গাছগুলো প্রায় ২০ বছর বয়সী হবে। এসব গাছের বাজারদর হিসাব করলে দেড় লক্ষাধিক টাকা হতে পারে।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, বিদ্যালয় মাঠের পশ্চিম পাশের আঞ্চলিক সড়কের পাশ থেকে কাটা হচ্ছে পুরাতন মেহগনিগাছগুলো। এর মধ্যে বিশালাকৃতির পাঁচটি মেহগনি ও একটি কাঁঠালগাছ ইতিমধ্যেই কেটে ফেলা হয়েছে, যা মাঠের মধ্যেই পড়ে আছে। এ সময় গাছগুলো কাটতে ভেঙে ফেলা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আঞ্চলিক সড়কের কিছু অংশ।

জানতে চাইলে গাছ কাটা শ্রমিকরা বলেন, প্রধান শিক্ষক আপাতত এই লাইনের ছয়টি মেহগনি ও একটি কাঁঠালগাছ কাটতে বলেছেন। আমরা দিন হাজিরা শ্রমিক হিসেবে গাছগুলো কাটছি।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়টি ১৯৯৩ সালে স্থাপিত হয় এবং তার কয়েক বছর পরেই গাছগুলো লাগানো হয়। সে হিসাবে গাছগুলোর বয়স ২০ বছরের কম হবে না। এ ছাড়া গাছগুলোর বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকার অনেক বেশি হবে। তবে গাছগুলো কাটার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি কেউই।

যথাযথ নিয়ম মেনে গাছগুলো কাটা হচ্ছে না স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাছগুলো কাটার জন্য ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে শুধু একটা রেজল্যুশন করা হয়েছে। ওখানে একটা সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হবে। তাই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। কাটা গাছের কিছু অংশ বিদ্যালয়ের একটি ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হবে এবং বাকিগুলো বিক্রি করা হবে।

গাছগুলো কে কাটছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত বিদ্যালয়ের কমিটির পক্ষ থেকে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। সেখানে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং আমিসহ সবাই আছি।

এ ব্যাপারে বহুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি টি এম মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখানে একটা সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করব। সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করার জন্য গাছগুলো বেধে যায়। যেহেতু গাছগুলো বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছিল, তাই আমরাই সেগুলো কেটে নিচ্ছি।

স্থানীয় বহুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই গাছগুলোর প্রকৃত মালিক হলো ইউনিয়ন পরিষদ। কিন্তু আমাকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। যদি গাছগুলো কাটার প্রয়োজন থেকেই থাকে, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী কাটতে হবে।

সড়ক ভাঙার বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই কর্মস্থলে আমার নতুন পদায়ন। আমি এই রাস্তাগুলো এখনো চিনিও না। তবু বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত করে দেখব।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এলিজা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাছ কাটতে হলে সেটা একটা কমিটি আছে। তাদের মাধ্যমে কাটতে হবে। কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদস্যসচিব বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তারা আবেদন করবেন এবং সে আবেদন ঢাকায় যাবে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসার পর গাছের মূল্য নির্ধারিত হবে। সেই নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরই গাছগুলো কাটতে পারবেন। 

তিনি আরও বলেন, তারা যেহেতু নিয়ম না মেনে গাজগুলো কাটছেন, তাই অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মামুনূল রশীদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইচ্ছে করলেই কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাছ কাটতে পারেন না। এর জন্য নির্ধারিত কিছু নিয়ম আছে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বন বিভাগ সেই গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দেব। পরে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। এর বাইরে গাছ কাটার কোনো সুযোগ নেই।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশুকাতে রাব্বি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা এভাবে গাছগুলো কাটতে পারেন না। তারা এর জন্য কোনো অনুমতিও নেননি। আমি এখনই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলছি। 

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলছি।

শুভ কুমার ঘোষ/এনএ