ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে টাঙ্গাইলের এক তরুণীর সঙ্গে কুমিল্লার যুবক নবী নেওয়াজের (৩৭) প্রেম ও বিয়ে হয়। তবে টেকেনি তাদের সংসার। বিবাহবিচ্ছেদের আগে স্ত্রী ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী যুবক। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে প্রতারণার অভিযোগে কুমিল্লার আদালতে একটি মামলা করেছেন। 

ভুক্তভোগী নবী নেওয়াজ জেলার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের পয়াব গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে। তিনি কুমিল্লা শহরে ঠিকাদারির ব্যবসা করেন।

অভিযুক্ত কামরুন্নাহার সীমা (২৬) টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার চন্দ্রবাড়ি গ্রামের শাহজাহান আলীর মেয়ে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেমোথেরাপি বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে ফেসবুকে কামরুন্নাহার সীমার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন চুয়াডাঙ্গার একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করতেন সীমা। প্রেমের এক পর্যায়ে ২০২০ সালের আগস্টে বিয়ে করেন তারা।বিয়ের পর উভয়ে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। ৩-৪ মাস পর কুমিল্লা টাওয়ার হসপিটালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে যোগদান করেন সীমা। কিছু দিন সেখানে চাকুরি করার পর যোগ দেন কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা মুন স্পেশালাইজড হসপিটালে। তার কয়েক মাস পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্সের চাকরি নিয়ে দেন নবী নেওয়াজ। সরকারি এ চাকরি পাইয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা খরচ করেছেন বলে জানিয়েছেন নেওয়াজ।

সরকারি চাকরি হওয়ার পর নেওয়াজের গুরুত্ব কমে যায় সীমার কাছে। ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি হয় উভয়ের মধ্যে। নেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সীমা ঢাকা যাওয়ার পর কেমন জানি পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমার ফোন তুলতে চাইত না, ব্যস্ততা দেখাত। বেশির ভাগ সময় নম্বর ব্লক করে রাখত। পরে আমি তার সঙ্গে কৌশলে দেখা করি। ধীরে ধীরে জানতে পারি, এক যুবকের সঙ্গে সে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। বুঝতে পেরে তাকে শুধরানোর চেষ্টা করি। কুমিল্লায় আসতে বলি। 

তিনি আরও বলেন, সীমা তার বাবা-মাকে নিয়ে কুমিল্লার ভাড়া বাসায় বেড়াতে আসে। কয়েক দিন ভালো থাকার পর তার বাবা-মা জমি কেনার নাম করে আমার কাছ থেকে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ধার নেয়। কয়েক মাস পর টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে বিলম্ব হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ বাধে। পরে আবার ঢাকায় চলে যায় সীমা। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আবার কুমিল্লার ভাড়া বাসায় আসে সীমা। তিন দিন সে কুমিল্লায় থাকে। এর মধ্যে এক দিন আমি গ্রামের বাড়িতে গেলে এ সুযোগে বাসার আলমারিতে থাকা ৭ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় চলে যায় সীমা। পরে তার কাছে আগের পাওনা টাকা এবং গোপনে নেওয়া ৭ লাখ টাকার বিষয়ে বললে সে এবং তার পরিবার মামলা-হামলার ভয় দেখায়। 

পরবর্তীতে চলতি বছরের মে মাসে আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠায় সীমা। তার বাবা-মায়ের সঙ্গ কথা বলে সমাধান না হওয়ায় চলতি বছরের জুনে প্রতারণার অভিযোগে কুমিল্লার আদালতে মামলা করি। মামলাটি কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। 

ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কামরুন্নাহার সীমাকে দুদিন ধরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

তবে কামরুন্নাহার সীমার মা শাহিদা বেগম সব অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। তার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। বনিবনা না হওয়ায় ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। টাকা-পয়সার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার মেয়ে কখনো এমন চরিত্রের নয়।

এসপি