মিথ্যা মামলা দায়ের করায় মামলার বাদীকে ৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। বুধবার (৩ আগস্ট) এই আদেশ দেন রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ এর বিচার মারুফ আল্লাম।

দণ্ডিত বাদী হলেন মতিউর রহমান শাহ। তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার শিয়ালা প্রেমতলী গ্রামের মৃত কাশেম আলী শাহর ছেলে।  

অনধিকার প্রবেশ, ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা, শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ এনে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন মতিউর রহমান শাহ। মামলা নম্বর সিআর ১০/২০১৯। এতে আসামি করেন একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত বাবুলাল শেখের ছেলে সানারুল ইসলাম সানু এবং খায়রুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেনকে।

সাজানো এই মামলা থেকে তাদের খালাস দিয়েছেন আদালত। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করায় তাদের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বেঞ্চ সহকারী নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বিচার শেষে আদালতের কাছে বাদীর অভিযোগ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক প্রতীয়মান হয়। ফলে আদালত আসামিদের খালাস দিয়ে বাদীকেই ৭ দিনের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে দুজন আসামির প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেন।  

রায় ঘোষণাকালে আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন বাদী মতিউর রহমান শাহ। পরে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত।

আদালত তার আদেশে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হলেও বাদী কিংবা তার কোনো একজন সাক্ষী আদালতকে শ্বাসরোধ সম্পর্কে একটি শব্দও বলেননি। শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। 

এ ছাড়া বাদীর জমিতে প্রবেশ করে আসামিরা তার ঘরবাড়ি ভাঙার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার পক্ষেও বাদীপক্ষের সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেননি।

বাদীপক্ষের উপস্থাপিত দুজন সাক্ষীর একজন বলেছেন, ঘটনার দিন তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। অপরজন বলেছেন, ওই জমিতে মূলত বাদী নয়, বরং আসামির স্থাপনা ছিল।

সাক্ষ্যপ্রমাণ, তদন্তকারীর প্রতিবেদন এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য অনুসন্ধানে আদালতের কাছে স্পষ্ট হয়, বাদী তার জমি আসামির কাছে বিক্রি করে ভিন্ন জায়গায় গিয়ে বসবাস করছিলেন। পরে আসামি সেই জমিটি তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করার উদ্যোগ নিলে বাদী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

বাদী চেয়েছিলেন, জমিটি তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রি না করে তার কাছেই যেন বিক্রি করেন আসামি। কিন্তু ভালো দাম না পাওয়ায় আসামি বাদীর কাছে ওই জমি বিক্রি না করে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেন। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা ঠুকে দেন বাদী।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, গত রোববার (৩১ জুলাই) রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। সেদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন বাদী মতিউর রহমান শাহ। ওই সময় আদালত তাকে তাৎক্ষণিক কারণ দর্শান। আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের প্রত্যেককে বাদী কেন ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন না এবং বাদীকে কেন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের জন্য কারাদণ্ড প্রদান করা হবে না তা জানতে চান আদালত।

কিন্তু বাদী কারণ দর্শাতে দুই দিনের সময় প্রার্থনা করেন। দুদিন পর বুধবার (৩ আগস্ট) ধার্য তারিখে বাদীপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করেননি। আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন বাদী মতিউর রহমান শাহ। তার অনুপস্থিতিতে এই আদেশ দেন আদালত।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরআই