পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষে এক বছরে বেড়েছে উৎপাদন। শুক্রবার (৫ আগস্ট) পাইকগাছা বিএফআরআইয়ের লোনা পানি কেন্দ্রে এক একরের একটি পুকুরে ৮৮ দিন বয়সী ভেনামি চিংড়ি চাষ করা হয়। এবার এক একর জমিতে ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩৪৪ কেজি বেশি। উৎপাদন বেশি হওয়ায় খুশি চাষিরা।

তারা দ্রুত ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষের দাবি জানিয়েছেন। প্রত্যাশা করছেন অচিরেই চাষের সরকারি অনুমতি মিলবে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড্স এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এস হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২২ সালের ৯ মে ব্যাংকক থেকে আনা ১০ লাখ পোনা ছাড়া হয় ৫টি পুকুরে। পোনা ছাড়ার ৫০তম দিনে একটি চিংড়ির গড় ওজন ছিল ১৮ গ্রাম। সবশেষ শুক্রবার (৫ আগস্ট) ৮৮তম দিনে গড় ওজন দাঁড়ায় ৩২ গ্রামে। গত বছর গড় ওজন ছিল ২৫ গ্রাম।

হুমায়ুন কবির আরও বলেন, ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়। ওই বছর ১০৯ দিনে ১ একর জলাশয়ে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল ৪ হাজার ১০১ কেজি। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রায় ৩৫০ কেজি ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন বেশি পেয়েছি। এবার ৮৮ দিনে ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি হয়েছে এক একরে।

তিনি বলেন, গত বছর ১০ লাখ পোনা ছেড়েছিলাম। সেখানে ৭ লাখ পিস চিংড়ি মাছ পেয়েছিলাম। এ বছর ১০ লাখ পোনা ছেড়েছি, আমরা আশা করছি ৯ লাখ ২৫ হাজার পিস চিংড়ি পাব।

এখানে মৃত্যুর হার কমে গেছে অভিজ্ঞতার কারণে। আমরা আশা করছি, গত বছরের তুলনায় এ বছর হেক্টরপ্রতি গড়ে ২ টন চিংড়ি বেশি পাব। গত বছর হেক্টর প্রতি ১০ টন চিংড়ি পেয়েছিলাম, এবার ১২ টন চিংড়ি পাব।

তিনি আরও বলেন, সরকার যে সফলতার কথা চিন্তা করছে, সেটা যদি বাস্তবে রূপ নেয় তাহলে আগামী বছর সরকার ভেনামি চিংড়ি চাষের বাণিজ্যিক অনুমোদন দিবে ইনশাআল্লাহ। এবার চিংড়ির ওজন বেড়েছে, কমেছে ২০ দিন সময়। ফলে ব্যয়ও কমেছে।

যশোর এমইউসি ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ভেনামি চিংড়ি চাষি শ্যামল দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার গত বারের চেয়ে ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন ভালো হয়েছে। এক একর পুকুরে ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতি হেক্টরে ১১ হাজার ১০০ কেজি চিংড়ি হবে।

ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষের জন্য চিংড়ি উৎপাদনকারীদের দাবির বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, দাবি বিষয় নয়, পরিবেশ-প্রতিবেশ সবকিছু মিলে কী পারমিট করে সেটা দেখার বিষয়। সেটার জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটি আছে। তারা বসে এর প্রডাকশন, রোগ-বালাই কী হয়েছে না হয়েছে সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে।

এবার ভেনামি চিংড়ির উৎপাদনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রডাকশন ‍এখনো কমপ্লিট হয়নি। আমরা জাস্ট শুরুটা দেখেছি। তবে যারা এটা ফার্মিং করেছেন, তারা বলেছেন ভালো প্রডাকশন হয়েছে। পরে মেজারমেন্ট করে কতটুকু প্রডাকশন হয়েছে তা বোঝা যাবে। প্রডাকশনে যাব কি না সেটি এখনো ঠিক হয়নি। 

আমরা এটার পজেটিভ-নেগেটিভ বিষয়ে এখনো যায়নি। এটা বিশ্লেষণ করে তারপর সে বিষয়ে সিদ্ধন্ত নেওয়া হবে। কারণ আমাদের যেমন আর্থিক বিষয় আছে তেমনি পরিবেশেরও বিষয় আছে। দুটি বিষয়ই বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। শুধু আর্থিক বিষয় দেখলে হবে না, আমাদের পরিবেশের বিষয়টিও দেখতে হবে। সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিব।

আরআই