খানাখন্দে ভরা মহাসড়ক। সামান্য বৃষ্টি হলে হাঁটুপানি কিংবা কাদায় পরিণত হয় সড়কটি। যান চলাচলের অনুপযোগী দীর্ঘদিন ধরে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পরিবহন যাত্রী ও পথচারীদের। এতে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

শনিবার (৬ আগস্ট) রাত ১টা। শেফালী খাতুন (২৮) নামের এক প্রসূতির প্রসবব্যথা ওঠে। পরে ভ্যানে করে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন স্বজনরা। খানাখন্দে ভরা সড়কে গাড়ির ঝাঁকিতে সড়কেই এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি।

শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জামালপুর (নন্দীবাজার)-ধানুয়া কামালপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা সড়কের কুড়িগ্রাম অংশের রৌমারী উপজেলা শহরের ইসলামী ব্যাংকের সামনে পৌঁছালে এ ঘটনা ঘটে।

প্রসূতি শেফালী খাতুন ফরিজল হকের স্ত্রী। তার বাড়ি রৌমারী সদর ইউনিয়নের রৌমারী উত্তরপাড়া গ্রামে।

শেফালী খাতুনের শ্বশুর আজিমুদ্দিন জানান, প্রসবব্যথা উঠলে শেফালী খাতুনকে অটোভ্যানে করে হাসপাতালে নেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া হয়। উপজেলা শহরের ইসলামী ব্যাংকের সামনে সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় গাড়িতে প্রচণ্ড ঝাঁকি লাগে। এ সময় বউমা কন্যাসন্তান জন্ম দেয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে সড়কটি বেহাল পড়ে থাকলেও কারও কোনো নজর নেই। সড়কটি ভালো থাকলে আজ আমার নাতনির জন্ম সড়কে হতো না। আমার ছেলের বউ এখনো অসুস্থ।

সড়কটির পাশে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটি কাদা আর পানিতে তলিয়ে যায়। আবার বৃষ্টি না হলে ধুলাবালিতে ভরে যায় পুরো শহর। এ সময় যানবাহনের ছিটা কাদা এসে দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। এতে অনেক ক্ষতি হয়।

অটোভ্যান চালক আব্দুল খালেক বলেন, এ রাস্তায় গাড়ি চালাবার গেলেই প্রত্যেক দিন গাড়ি নষ্ট হয়। দিনে যা আয় হয়, গাড়ি হারতেই (মেরামত) তা শ্যাষ হয়। আমরা গরিব মানুষ। রাস্তা ভালো না। বাঁচুম কিবা কইরা?

রৌমারী উপজেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম মিয়া বলেন, ২০১৮ সালে সাড়ে ৩১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য সরকার ৩৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও জনগণ এখনো এর কোনো সুফল পাচ্ছে না। দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ গেট থেকে থানা মোড় পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ। বেহাল এ সড়কে গাড়ি চলা তো দূরের কথা, হেঁটে চলাই মুশকিল। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে একাধিকবার আনলেও কোনো ফল হয়নি।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও, ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, রাস্তার মাঝে সন্তান প্রসবের বিষয়টি জেনেছি। এতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। সড়কের বেহাল দশার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)-সহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহোদয়কে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপদের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলীকেও অনেকবার বলা হয়েছে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, মাটি না পাওয়ার কারণে রাস্তার কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, ১৫ আগস্ট থেকে কাজ শুরু করবেন।

মো. জুয়েল রানা/এনএ