পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় প্রায় দুই লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য একমাত্র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের চালক মজিদের মৃত্যুর পর চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। গত জুন মাস থেকে হাসপাতালটির অ্যাম্বুলেন্স চালক না থাকায় জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। 

এ কারণে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের ভরসা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা। এতে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এ হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এর মধ্যে একটি পুরোনো। তবে স্বাস্থ্যসেবার গতিশীলতায় ২০২১ সালের আগস্ট মাসে হাসপাতালটিতে একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একজনই চালক ছিলেন আব্দুল মজিদ বাবুয়া। গত ১৬ জুলাই তিনি মারা যাওয়ার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে জরুরি সেবার এই সার্ভিসটি।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর স্বজনরা জানান, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকার কারণে বিকল্প ব্যবস্থায় কয়েকগুন বেশি টাকায় রোগী নিয়ে যেতে হয়। 

তারা বলছেন, এমনিতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে জেলা পর্যন্ত ১ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতো। এখন বাইরে থেকে যেকোনো পরিবহন নিলে ২ হাজার পর্যন্ত খরচ হয়ে যায়। তাই দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের চালক দেওয়ার দাবি জানান দেশের সীমান্তবর্তী উপজেলার তেঁতুলিয়ার জনসাধারণ।

হাসপাতালের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট তেঁতুলিয়ার এই হাসপাতালে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা হলে প্রথমত পঞ্চগড়ে আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে এখান থেকে রেফার্ড করে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও রংপুরে নিয়ে যেতে হয়। এ জন্য রেফার্ড হওয়া রোগীদের নিতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস নিয়ে যেতে হয়। আর এজন্য বিপদে পড়ে বেশি টাকা দিয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়মিত রোগী পরিবহন করেন রোগীর স্বজনরা।

মমিনপাড়ার আজাদ হোসেন জানান, পনের দিন আগে আমার ভাই দুর্ঘটনার শিকার হলে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যাই। রোগীর সমস্যা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় বেশি টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে যেতে হয়। এতে টাকা বেশি লাগলেও মাইক্রো ম্যানেজ করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

কালান্দিগঞ্জ ও শালবাহানের আমিরুল, শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, তেঁতুলিয়া হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে কয়েকদিন আগে। পরে বেশি টাকা দিয়ে রোগীকে নিয়ে যেতে হয়েছে। অতিদ্রুত অ্যাম্বুলেন্স চালক দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান তারা।  

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো: আবুল কাশেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চালকের মৃত্যুর কারণে জুন থেকেই হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ থাকায় এখানকার রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বুঝতে পারছি। তাই অ্যাম্বুলেন্সের চালক নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অবগত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল হাসান জানান, তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মারা যাওয়ার কারণে চালকের পদটি শূন্য রয়েছে। শুধু তেঁতুলিয়ায় নয়, দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও অ্যাম্বুলেন্স চালক শূন্য রয়েছে বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। বিধি মোতাবেক দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স চালক নিয়োগ করা হবে বলে তিনি জানান।

এমএএস