চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারি বিলের নালার মুখে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে পড়েছে ১০ হাজার বিঘা ফসলি জমির ধান। গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলার তিন ইউনিয়নের পাঁচ মৌজার মধ্যে থাকা হাজারদিঘী বিলের পানি আটকে রাখতে এই বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে বৃষ্টির পানি নালা দিয়ে নামতে না পারায় কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমির ধান গাছ ইতোমধ্যে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। 

গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিলের আশপাশে থাকা জমির কয়েকশ কৃষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা খাতুন, নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন। এ সময় দুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় নাচোল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ উদ্দিন, গোমস্তাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন মন্ডলসহ স্থানীয় কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন। 

জানা যায়, স্থানীয় কৃষকদের বাধা উপেক্ষা করে সরকারি নালায় অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে হাজারদিঘী বিলের ইজারাদার মো. নাসিম। কয়েকশ কৃষক অনুরোধ করলেও তা শোনেননি ইজারাদার। ইতোমধ্যে রড-সিমেন্ট দিয়ে পাকা ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছে তারা। কৃষকরা বাধা দিতে গেলে উল্টো তাদেরকে নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। জোরপূর্বক এই ঢালাইয়ের বাঁধ নির্মাণ করেন হাজারদিঘী বিলের ইজারাদার। এতে বিলের অতিরিক্ত পানি চলাচলে বাধা পেলে তলিয়ে যায় জমির ধান। 

স্থানীয় কৃষক মঞ্জুর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পরিবারের প্রায় ৭০ বিঘা ও আমার ব্যক্তিগত ১০ বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি প্রবাহে বাধা দিতে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের কারণে আমার মতো কয়েকশ কৃষক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের স্বপ্নগুলো এখন পানির নিচে। এর একমাত্র কারণ অবৈধভাবে এই বাঁধ নির্মাণ। কারণ বাঁধের কারণে পানি নামতে পারছে না। 

কৃষক লোকমান আলী জানান, সরকারি নালায় বাঁধ নির্মাণের কোনো অধিকার নেই বিলের ইজারাদারদের। এমনকি খালাটি বিলের অংশ নয়। অথচ আইন অমান্য করে তারা ঢালাই দিয়ে এই বাঁধ নির্মাণ করছে। দুই ইউএনও এসে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে পানি নামার ব্যবস্থা করেছেন। আমরা চাই, অবৈধ এই বাঁধ ভেঙে বিলের অতিরিক্ত পানির অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা হোক। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কৃষক বলেন, বাঁধ নির্মাণকাজে আমরা বাধা দিলে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এসে আমাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভয়ে মুখ খুলতে পারিনি। ধারদেনা করে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। এখন সবটুকু ধান পানির তলে। নালা দিয়ে পানি নামতে না পারলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। সরকারের কাছে অনুরোধ কৃষকদেরকে বাঁচান। না হলে আমরা না খেয়ে মরব। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সরকারি জায়গায় থাকা নালার পানি প্রবাহে বাধা দিতে বাঁধ নির্মাণ করা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী কাজ। ইজারাদারকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে। হাজারদিঘী বিলটি জেলা প্রশাসন ইজারা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুপারিশ করা হবে।

 

গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা খাতুন ঢাকা পোস্টকে জানান, কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি ও নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাজারদিঘী বিলের মুখে নির্মাণ করা বাঁধ পরিদর্শন করেছি৷ মৌখিকভাবে বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ইজারাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

হাজারদিঘী বিলের ইজারাদার নাসিম বলেন, বিলের ইজারা বাবদ সরকারকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব দিতে হচ্ছে। কিন্তু বিলে পানি থাকছে না। পানি না থাকলে আমরা কিসে মাছ চাষ করব? পানি না থাকার কারণে গত বছর আমাদের প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে৷ এছাড়াও বাঁধটি নির্মাণ করা হলে কৃষকরা সেচের জন্য সারা বছর পানি পাবেন ও আমরাও সঠিকভাবে মাছ চাষ করতে পারব। তবে কোনো অনুমতি না নিয়ে সরকারি নালায় বাঁধ নির্মাণ করা ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান বলেন, সরকারি নালায় ব্যক্তিগতভাবে এভাবে বাঁধ নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। বাঁধ নির্মাণের ফলে কৃষকদের ধানের জমিতে জলবদ্ধতা নিয়ে অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে দুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর