গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় লাভের আশায় এ বছরও পাট চাষ করেছিলেন নেত্রকোণার হাওর উপজেলা মদনের কৃষকরা। কিন্তু গত বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসের অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় কৃষকরা লাভের পরিবর্তে এ বছর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮০০ কৃষকের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে।  

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর মদন উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল ৯৩০ হেক্টর জমিতে। তবে স্থানীয় কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও পাঁচ হেক্টর বেশি জমিতে অর্থাৎ ৯৩৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেন। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও বন্যায় জমে থাকা পানিতে ৯৩৫ হেক্টরের মধ্যে  ৮০০ কৃষকের ৬৫ হেক্টর জমির পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক ৭৩ লাখ টাকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাট চাষের শুরুর দিকে সৃষ্ট বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় এখনো উপজেলার অনেক এলাকার কৃষকদের পাটক্ষেতে জলাবদ্ধতা রয়েছে। দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় অনেক কৃষকের জমিতে রোপণ করা পাটবীজ আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক কৃষকের জমির পাট গাছ এক থেকে দুই ফুটের বেশি লম্বা হয়নি। এছাড়া কৃষকদের কেউ কেউ জমিতে একাধিকবার পাট বীজ রোপণ করলেও তা পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলার চাঁনগাঁও ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে পাট চাষ করে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। যে টাকা খরচ হয়েছে- তাও আমাদের উঠবে না।

নিজের ৫০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে এক বিঘা জমির পাটও ঘরে তুলতে পারেননি বলে জানান উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের কৃষক নুরুল ইসলাম।

এদিকে উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের চন্দ্রতলা গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ১৬০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। বন্যার কারণে সব নষ্ট হয়ে গেছে।

মদন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হলেও বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ৮০০ কৃষকের ৬৫ হেক্টর জমির পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৭৩ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম লুৎফুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পাটচাষিদের তালিকা তৈরি করার জন্য স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহায়তার আওতায় নিয়ে আসা হবে।

জিয়াউর রহমান/আরএআর