রংপুরের গঙ্গচড়ায় অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে এক দিনমজুরের বাড়ির তিনটি ঘরসহ আসবাবপত্র। এ ছাড়া ঝলসে গেছে দুটি গরু। এতে প্রায় তিন লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ওই পরিবারের লোকজনের আহাজারি যেন থামছেই না।

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন গান্নারপাড়ের বাসিন্দা দুদু মিয়ার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যায় দুদু মিয়া ও তার ছেলে শাকিল হোসেন মজুরির টাকা আনতে হাটে যান। আর রান্না উঠিয়ে দুদু মিয়ার স্ত্রী আদুরী বেগম বাইরে বের হন। ঘরে ঢোকার আগেই আদুরী বেগম দেখতে পান রান্না ঘরে আগুন জ্বলছে। দ্রুত এ আগুন পাশের দুটি ঘরে লেগে যায়। এতে তিন লাখ টাকার মালামল পুড়ে যায়। দুটি গরুও আগুনে ঝলসে যায়।

আদুরী বেগমের চিৎকারে আশেপাশের মানুষ ছুটে গিয়ে বালতি, জগ, বদনায় করে নদী থেকে পানি তুলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিসের একদল কর্মী সেখানে পৌঁছান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রহিম পায়েল জানান, তারা কয়েকজন মিলে ওই এলাকায় সংবাদের তথ্য সংগ্রহে গিয়েছিলেন। হঠাৎ তিস্তার তীর রক্ষা বাঁধের কাছাকাছি পৌঁছালে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পান। আধা ঘণ্টার মতো থাকা ওই আগুনে কৃষক দুদু মিয়ার তিনটি টিনের ঘর, ঘরে থাকা সমস্ত আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। 

আগুন নেভানোর জন্য দুদু মিয়াকে স্থানীয় প্রতিবেশীরা সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেন। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসার আগেই স্থানীয়রা নদীর পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন বলেও জানান ওই প্রত্যক্ষদর্শী।

আগুনে ঝলসে যাওয়া গাভি ও ছাগলের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দুদু মিয়া (৬৫) বলেন, বাগের হাটোত থাকি মোর বাড়ির পাকে আগুন দেখছু। পরে মোক ফোন দিয়া কওছে আগুন নাগছে। বাড়িত আসি দেখো সোউগ শ্যাষ। মোর কপালোতে সুখ নাই। তিস্তাপাড়ের আগুন-পানি মোক ফকির বানাইল বাহে। 

আগুন নেভানোর সময় এগিয়ে আসা স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেওয়া হয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস অফিস থেকে গান্নারপাড়ের দূরত্ব তিন কিলোমিটার। সর্বোচ্চ সময় লাগে ৬ মিনিট। কিন্ত আগুন লাগার ৩০ মিনিটেও ফায়ার সার্ভিসের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সঠিক সময়ে আসতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমে যেত। সাংবাদিকেরা উপস্থিত থাকা অবস্থায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেখানে ৭টা বেজে ৫২ মিনিটে আসে। এটা খুবই দুঃখজনক। 

এদিকে ঘটনাস্থলে দেরিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার মোজাম্মেল হক মুঠোফোনে বলেন, পথ ভুল হওয়ায় সঠিক সময়ে গাড়ি পৌঁছাতে পারেনি। তবে দেরি হলেও ফায়ার আগুন নিয়ন্ত্রণ করে স্টেশনে ফিরেছেন।

গঙ্গচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদ উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, গান্নারপাড় এলাকার দিনমজুর দুদু মিয়ার বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনাটি শুনেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বুধবার উপজেলা পরিষদে আসতে বলা হয়েছে। সরকারিভাবে তাদের সহায়তা করা হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই