সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের বিশ্বম্ভপুর উপজেলার ফতেপুরের ফজনা সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি ধসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে চার উপজেলার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। 

জানা গেছে, সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে ৫০ মিটার দীর্ঘ ফজনা সেতু। সড়কের মাত্র এক-দুই ফুট অংশ সেতুর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এতে হাঁটা ছাড়া পাড় হওয়া যাচ্ছে না সেতু। মাঝে-মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মোটরসাইকেল। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তবে অল্প বৃষ্টি হলে সেতুর সঙ্গে যুক্ত থাকা বাকি অংশ ধসে সেতু থেকে সড়ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সুনামগঞ্জ, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভপুর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্যার কয়েক মাস আগে থেকেই সেতুর দুদিকের অ্যাপ্রোচ সড়কের ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে চেষ্টা করা হয় ভাঙন আটকানোর। তারপরও রক্ষা করা যায়নি সেতুর দুদিকের অ্যাপ্রোচের মাটির ধস।

তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, এই কাজ ঠিকমতো করা হয়নি। যদি সঠিকভাবে ৪৩ লাখ টাকা খরচ করা হতো তাহলে দ্বিতীয়বার সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক ভেঙে বিলীন হয়ে যেত না। 

৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। মিঠু আরডি নামে এক ব্যক্তি ভাঙা অংশের ছবির সঙ্গে লেখেন, ‘সুনামগঞ্জ-ফতেপুর-আনোয়ারপুর-তাহিরপুর সড়কের ফজনা সেতুর সংযোগ অংশটি ভেঙে পড়েছে। যেকোনো সময় বিপদ ঘটতে পারে। শুনেছি সড়ক ও জনপদ ৪৩ লাখ টাকা টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে। তারপরও কেন এই অংশ টিকল (টিকে থাকলো) না প্রশ্ন থেকেই যায়। মজার ব্যাপার হলো ৪৩ লাখ কয়েন ফেললেও সেতুর দুপাশ ভরা যেত।’ 

ঠিকাদারের কাজ ঠিক ছিল, কাজের পর সড়কের ভিডিও ও ছবি আছে দাবি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, এই ভাঙনরোধসহ আরও আনুষঙ্গিক কিছু কাজের বরাদ্দ ছিল ৪৩ লাখ টাকা। কাজের পরিমাণ অনুযায়ী বিল পেয়েছে ঠিকাদার। পরবর্তী ভাঙন হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। 

ফতেপুর গ্রামের মো. দিলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই সেতুর সড়ক ভেঙে যাওয়ায় আমরা আদালত, স্কুল-কলেজ, রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারছি না। মোটরসাইকেলে রোগী নেওয়া সম্ভব না। তাই কোলে করে নিতে হয় নদী ঘাটে। মহাবিপদে আছি আমরা। 

পিরোজপুর গ্রামের তাছলিমা বেগম বলেন, এই জায়গা দিয়ে হেঁটে আসতেই ভয় লাগে। যদি পড়ে যাই, তাহলে কীভাবে উঠব? অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় একজন নারী কীভাবে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করবে? 

একই গ্রামের হোসাইন আহমেদ বলেন, এই ভাঙন অল্প ছিল। এরপর এখানে কাজ করে মেরামত করা হয়েছিল। তারপরও আবার ভেঙে গেছে। শুনেছি এই কাজে ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কাজ ঠিকমতো হলে আবার ভাঙত না। এই কাজে জালিয়াতি ছিল। এখন তার জন্য আমরা কষ্ট করতেছি। 

ফতেপুর গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ রঘুনাথ গোস্বামী বলেন, সজনার (ফজনার) সেতুর দুদিকের সড়ক ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আর দুদিন বাদে দেখা যাবে ব্রিজটাই ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে।  

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রথম বন্যার পর এটা ভাঙা শুরু হয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করে দেই। কিন্তু চ্যানেল বা নদীর গভীরতা বেশি এবং অ্যাপ্রোচের উচ্চতা অধিক হওয়ায় মাটি বা কোনো সাপোর্টই টিকছে না। আগামী শুষ্ক মৌসুমে আরসিসি পাইলিংয়ের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে এটি রক্ষা করার পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করব। তার আগে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে আগামী ৪-৫ দিনের ভেতরেই ভাঙা অংশে স্টীলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে দেব। ইতোমধ্যে ব্রিজ নির্মাণের মালামাল নেওয়া শুরু হয়েছে। 

এসপি