ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে ওঠা চর। নাম মুসার চর। চরটির অবস্থান কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে। নদীবেষ্টিত চরটিতে বসবাস করে প্রায় ৫০টি পরিবারে তিন শতাধিক মানুষ। 

জানা গেছে, চরের চারদিকে থৈ থৈ পানি থাকায় যোগাযোগের একমাত্রই ভরসা নৌকা। বর্ষাকালে তিন মাস থাকতে হয় চরম দুর্ভোগে। চরের লোকসংখ্যা তিন শতাধিক হলেও নদ পাড়ি দিয়ে মূল ভূখণ্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না কেউ। ফলে অধিকাংশ শিশু-কিশোর প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার হতে পারছে না। 

এদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে একেকজনের বাড়ি ২-৩ বার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। চরের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতে পাড়ি দিতে হয় ৫-৬ কিলোমিটার নদী পথ। নৌকার অভাবে পড়তে হয় বেকায়দায়। গুরুতর রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটেছে।

হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও কারও বাড়িতে নেই টেলিভিশন কিংবা ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি। ভোটের সময় চরের মানুষের কদর থাকলেও ভোট শেষে তাদের খোঁজ-খবর রাখে না কেউ।

সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক দ্বীপের মতো দেখতে। চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। অগোছালো কয়েকটি বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে পানির ওপর। নৌকা ছাড়া যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এখানেই ৫০টি পরিবার ঠাঁই নিয়েছে। এখানকার বাসিন্দারা কেউ দিনমজুরের, কেউ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ কোনো নাগরিক সুবিধা পায় না তারা।  

চরের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার তিনটা সন্তান। একজনের বয়স ১২, একজনের ৮ আর আরেকজনের ৩ বছর। এই গ্রামে স্কুল-মাদরাসা না থাকার কারণে পড়াতে পারছি না। অন্য জায়গায় রেখে যে পড়াব, সে সামর্থ্য আমাদের অনেকেরই নেই। ভোটের সময় মেম্বার, চেয়ারম্যান বলে স্কুল করে দেবে কিন্তু ভোটের পর কেউ আর খবর রাখে না। সব কিছু থেকে আমরা বঞ্চিত।

নুর ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, আমরা নদীভাঙন থেকে মুক্তি চাই। আমার জীবনে আমি ১২-১৩ বার বাড়ি ভাঙছি। এ জীবনে আরও যে কতবার বাড়ি ভাঙতে হবে জানি না। তাছাড়া কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে সময়মতো নিয়ে যেতে পারি না। খুব সমস্যাত পড়ছি আমরা, দেখার কেউ নেই আমাদের। 

আমিরুল ইসলাম নামে এক কিশোর বলে, আমার গ্রামে স্কুল নেই। তাই লেখাপড়া করতে পারি না। এখন নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসারে খরচ দেই। আর একটু বড় হলে ঢাকা গিয়ে কাজ করব।

সুমাইয়া খাতুন বলে, এখানে স্কুল নেই। স্কুল যে কেমন তাও জানি না। মায়ের সঙ্গে বাড়িতে কাজ করি।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবু বক্কর খাঁন বলেন, আমার ওয়ার্ডের মুসার চরে প্রায় ৮০টি পরিবার বসবাস করত। গত এক মাসে অর্থেক বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এখানকার শিশু-কিশোররা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে আমার ওয়ার্ডটার অবস্থা ভয়াবহ। কেউ না দেখলে বিশ্বাস করবে না এখানকার মানুষ কি কষ্টে থাকে।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাবলু মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের মুসার চরের বাসিন্দারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমি একটি স্কুল তৈরির ব্যাপারে অনেক এনজিও সঙ্গে কথা বলেছি। কোনো এনজিও যদি আমার ইউনিয়নে স্কুল করতে চায়, তাহলে মুসার চরে করা হবে।

জুয়েল রানা/এসপি