ঘরের ভিমের মাথায় চার টুকরা রড বাইরের দিকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভেতরে রডের ছিটেফোঁটাও নেই। ইটের ওপর ইট বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে বালু-সিমেন্টের গাঁথুনি না দিয়ে ভিম ঢালাই করা হয়েছে। 

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে এমন অনিয়ম দেখা গেছে। 

খবর পেয়ে শুক্রবার (১২ আগস্ট) দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের আজমপুর এলাকায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। রাতেই তারা গিয়ে ঢালাইকৃত ভিম ভেঙে রড না পেয়ে পাঁচটি ঘর ভেঙে দেন। এ সময় নির্মাণাধীন আরও ছয়টি ঘরসহ ১১টি ঘরের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

পরে উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে বিষয়টি অবগত করলে শনিবার (১৩ আগস্ট) তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্মাণকারীদের নিজস্ব খরচে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ওই ১১টি ঘর নতুন করে নির্মাণের নির্দেশ দেন। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দোয়ারাবাজারের মান্নারগাঁওয়ে তৃতীয় পর্যায়ে ৫৯টি গৃহনির্মাণ কাজ এপ্রিল মাসে শুরু হয়। ঘরের কাজ করাচ্ছিলেন উপজেলা সদরের রায়নগরের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য তাজির উদ্দিন। কাজের শুরুতেই ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছিল। নিম্নমানের কাজ হতে দেখে স্থানীয়রা বাধা দিলে কয়েকজনকে আটকও করা হয়। এরপর থেকে ঘর নির্মাণের অধিকাংশ কাজ হতে থাকে রাতের অন্ধকারে। ঘর নির্মাণের প্রত্যেকটি ধাপে ধাপে অনিয়ম হয়েছে। 

গ্রেড ভিমের ভেতরে চারটি রডের বদলে একটি রড দেওয়া হয়েছে। অনেক ঘর রড ছাড়াই ঢালাই করা হয়েছে । ইটের ওপর ইট দিয়ে সিমেন্টের গাঁথুনি ছাড়াই লিন্টার তৈরি করা হচ্ছে। বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ভিট মাটি, পাথরের পরিবর্তে ব্লকের অবশিষ্টাংশ খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে নামমাত্র। ইটসলিং বা প্লেটের পরিবর্তে কাদায় করা হচ্ছে ঢালাই মিক্সার।  

আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা মঈন উদ্দিন বলেন, সরকারে গরিবদের ঘর দিয়েছে। এমন ঘর দিয়ে কি লাভ যে ঘর দুদিনও টিকবে না। রড নাই, মশলা নাই, বালু নাই, সিমেন্ট নাই।  এটা সরকারের টাকার ক্ষতি। এমন ঘর দেওয়ার চেয়ে না দেওয়া ভালো। 

আব্দুল হান্নান বলেন, সরকারের গৃহ নির্মাণের কাজ ইউএনও-পিআইওর তত্ত্বাবধানে করানোর কথা থাকলেও কাজ করছে স্থানীয় ব্যক্তি তাজির উদ্দিন। আমি তাজির উদ্দিনকে দিয়ে কাজ করানোর প্রতিবাদ করায় আমিসহ কয়েকজন আটক হই। আমাদের আটকের কারণেই আজ দুর্নীতির এই উৎসব। 

দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল খালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম হওয়ায় শুরুতেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রতিবাদ করেন। তারা উপজেলা প্রশাসনকে ঠিকাদার তাজির উদ্দিনের অনিয়মের কথা জানান। ওই সময় প্রতিবাদকারীদের উল্টো হেনস্তা করায় অনিয়ম বেশি হতে থাকে। 

গৃহ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার তাজির উদ্দিন বলেন, গৃহ নিমার্ণের জন্য কমিটি আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সেক্রেটারি। আমি মালামাল সরবরাহ করি। আমি ঠিকাদার নই।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াংকা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজ আমরাই করাচ্ছি তবে মিস্ত্রির মাধ্যমে। মিস্ত্রিরা অগোচরে অনিয়ম করছে এমন খবর পেয়ে সরকারি অফিস সময়ের বাইরেও রাত ১টায় আমি ঘটনাস্থলে যাই এবং সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেই। পরদিন জেলা প্রশাসক এসে তাদের খরচে পুনরায় গৃহ নির্মাণের নির্দেশ দিয়ে দোষীদের আর্থিক সাজা দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, এই প্রকল্প আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কাজে অনিয়ম করলে কারও ছাড় নেই। এর জন্য আমি ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে প্রস্তুত আছি। আজ থেকে আমার অফিস হবে আজমপুর, প্রধানমন্ত্রীর গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে। 

আরএআর