রাজধানীর উত্তরায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের জানাজা ও দাফন জামালপুরে সম্পন্ন হয়েছে। দাফনকৃতরা হলেন- ঝরনা, তার দুই শিশুসন্তান জান্নাত ও জাকারিয়া এবং বড় বোন ফাহিমা। 

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাত ১১টায় জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার আগ পয়লা গ্রামে ঝরনা, তার দুই সন্তান জান্নাত ও জাকারিয়া এবং রাত ১২ টায় জেলার ইসলামপুর উপজেলার ঢেংগারগড়ে ফাহিমার জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়। 

রাত ১০ টার দিকে নিহতদের মরদেহ জামালপুরে তাদের নিজ নিজ গ্রামে এসে পৌঁছে। সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের বাড়িতে স্বজনসহ এলাকার শত শত মানুষ ভিড় করছিলেন। মরদেহগুলো পৌঁছাতেই পরিবারের সদস্যদের আহাজারি শুরু হয়।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানান, বড় বোন ফাহিমার মেয়ে রিয়া মনির বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত বৃহস্পতিবার স্বামী জাহিদ, দুই সন্তান জান্নাত ও জাকারিয়াকে নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন ঝরনা। এরপর শনিবার বিয়ে শেষে স্বামী জাহিদ নিজ বাড়িতে ফিরে এলেও দুই সন্তানসহ ঢাকাতেই থেকে যান ঝরনা। 

সোমবার বউভাত শেষে বর-কনেসহ ফাহিমা, ঝরনা ও তার দুই সন্তান এবং বরের বাবা রুবেল মিয়া উত্তরা থেকে আশুলিয়া ফিরছিলেন। পথে গার্ডার দুর্ঘটনায় বর-কনে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও গাড়িতে থাকা বাকি পাঁচজনই নিহত হন। 

তাদের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত ঝরনার স্বামী জাহিদ আকন্দ জানান, আগামী শুক্রবার ঢাকায় গিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের বাড়িতে নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন দুর্ঘটনায় এভাবে সবাইকে হারিয়ে ফেলব, তা কোনোদিনই ভাবিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাহিদের মা জবেদা বেগম বলেন, এর আগেও দুর্ঘটনায় আমার বড় ছেলেকে হারিয়েছি। আজ ছোট ছেলের স্ত্রী ও আদরের শিশু সন্তানদের চিরদিনের জন্য হারালাম। আমার হারাবার আর কিছু বাকি রইল না।

নিহত ঝরনা ও ফাহিমার বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, দুর্ঘটনা নয়, আমার দুই মেয়ে আর দুই নাতি-নাতনিকে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের কাছে আমি এর বিচার চাই।

স্থানীয় আব্দুল মান্নান বলেন, তারা ভিডিওতে দুর্ঘটনার চিত্র দেখেছেন। এতে গাড়ি চালকের কোনো দোষ নেই। অসংখ্য গাড়ি সেই রাস্তা দিয়ে চলছিল। যাদের গাফিলতির কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটল এবং একই পরিবারের এতজনের প্রাণ গেল, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ নিহতদের পরিবারকে যেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

উবায়দুল হক/আরএইচ