সরকার নৌযানের ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়ালেও বাড়েনি পটুয়াখালী-ঢাকাগামী রুটের লঞ্চের ভাড়া। আগের ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন লঞ্চের পটুয়াখালীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি ও যাত্রীদের বাড়তি ভাড়ার চাপে না রাখার জন্য লঞ্চ মালিকরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট রাত ১২টার পর থেকে ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন ও অকটেনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। প্রতি লিটারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেনে ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা, পেট্রলে ৪৪ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে লঞ্চ ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যা গতকাল মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাত থেকে কার্যকর হয়েছে। 

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় পটুয়াখালী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে এমভি সুন্দরবন-৯ ও এমভি কুয়াকাটা-১ লঞ্চ ছেড়ে যায়। বুধবার এমভি প্রিন্স কামাল ও এমভি পূবালী-১২ যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ চারটি লঞ্চের একটিতেও ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তারা আগের ভাড়ায় লঞ্চ চালাবেন বলে জানা গেছে। 

লঞ্চযাত্রী রেজাউল কামাল পল্টু (৫৫) বলেন, দেশের যে অবস্থা, বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে দাম তার ওপর লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি করা সরকারের ঠিক হয়নি। আমরা যারা জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যাচ্ছি, তাদের পক্ষে এতো ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

আরেক যাত্রী মো. সেকান্দার মোল্লা (৬২) বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমরা যারা আরামপ্রিয় মানুষ, তারা লঞ্চে ভ্রমণ করি। তাদের জন্য এ ভাড়াটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। ভাড়াটা কমানো দরকার।

এ ব্যাপারে এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের স্থানীয় বুকিং ইনচার্জ মো. জাফর আহমেদ বলেন, যাত্রীদের মানসম্মত সেবা প্রদানের কথা চিন্তা করে আমরা অনেক কম ভাড়া নিচ্ছি। এখন সরকার যে ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছে তাতে ডেকের ভাড়া হবে ৭৭৫ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ২ হাজার ২০০ টাকা এবং ডবল কেবিনের ভাড়া হবে ৩ হাজার ৭০০ টাকা। অথচ এ ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া সম্ভব হবে না।

এমভি পূবালী-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার ইকবাল মাহমুদ বলেন, সরকার নির্ধারিত লঞ্চ ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা সম্ভব না। যেখানে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে, সেখানে যদি সরকার নির্ধারিত ভাড়া টাকা আদায় করা হয়, তাহলে লঞ্চে যাত্রী পাওয়া যাবে না। তাই পূর্বের যে লঞ্চ ভাড়া ছিল সেই টাকাই আদায় করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, লঞ্চ ব্যবসায়ীরা খুবই ক্ষতির মধ্যে আছেন। একদিকে তেলের দাম বেড়ে গেছে, অন্যদিকে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। আবার সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে লঞ্চ ব্যবসা পরিচালনা খুব কঠিন হবে। 

এমভি জামাল-৫ লঞ্চের কেবিন বুকিং ইনচার্জ অশোক দাস বলেন, সরকারিভাবে যখনই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়, আমাদের লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কখনো সেই ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে না। এর আগেও যখন বেশি ভাড়া ছিল, তখন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কম ভাড়া আদায় করেছে। এখন একটি সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৩০০ টাকায় ভাড়া হয়ে থাকে। অথচ বর্তমানে সরকারি রেটে এই কেবিন ভাড়া ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৮০ টাকা। ডাবল কেবিন ভাড়া দেওয়া হয় ২ হাজার ৫০০ টাকায় কিন্তু সরকারি রেট ৫ হাজার ৫৬০ টাকা। আর ডেকের যাত্রীদের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্য ৬৯০ টাকা, কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ আদায় করছে ৫০০ টাকা।

আরএআর