শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বামী-সন্তানসহ এসে বসবাস করছেন লাখ লাখ মানুষ। তারা সন্তানদের ভাড়া বাসায় রেখে কাজে যোগদান করেন। এই সুযোগে স্থানীয়রাসহ ভাড়াটিয়ারাও সেসব সন্তানের যৌন নিপীড়নের সুযোগ নিচ্ছেন। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায়। তবে এখানে মূল অভিযুক্তকে কৌশলে বাদ দিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে নিরপরাধ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২ আগস্ট ঘোষবাগ এলাকায় পোশাক শ্রমিকের ৪ বছরের কন্যাশিশুকে চকলেট খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে জঙ্গলে নিয়ে যান স্থানীয় বাড়িওয়া সিরাজ। পরে ধর্ষণের চেষ্টা করলে ভুক্তভোগী চিৎকার শুরু করেন। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গেলে পালিয়ে যান সিরাজ।

স্থানীয়রা জানান, খবর পেয়ে ভুক্তভোগীর মা কারখানা থেকে ছুটে এসে সিরাজের বাড়িতে গিয়ে ঘটনা খুলে বলেন। পরে স্থানীয় শুভসহ বেশ কয়েকজন টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তবে কৌশলে সিরাজের নামের পরিবর্তে মহসিনের নাম বলে ভুল বোঝানো হয় ভুক্তভোগীদের। পরে ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দায়ের করলে প্রাথমিক তদন্তে আসে আশুলিয়া থানা পুলিশ। তদন্ত করে সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে মহসিনের বিরুদ্ধেই মামলা নেয় পুলিশ।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিশুর মা বলেন, আমি তো ভাড়াটিয়া। আমাকে যে নাম বলেছে স্থানীয়রা আমি সেই নামেই অভিযোগ দায়ের করেছি। অভিযোগের পর পুলিশ তো তদন্তে গিয়েছিল, তার পর মামলা নিয়েছে। পুলিশ তাহলে কী তদন্ত করল? 

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন লেহাজ উদ্দিনের ছেলে শুভ টাকার বিনিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন। আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি বলে আমাকে প্রতিনিয়ত মেরে ফেলাসহ ধর্ষণের হুমকি দিয়ে চলেছে। আমি খুব ভয়ে আছে। চিন্তা করছি বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যাব। এখানে আমি ও আমার মেয়ে নিরাপদ নয়। কোনো ধরনের সহযোগিতাও পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আমাকে স্থানীয়রা ভুল নাম বলেছে। পরে শুনি ওই এলাকার আরেক জনের নাম মহসিন। আর যিনি ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন তার নাম শফিকুল ইসলাম সিরাজ। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুদ মুন্সীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, আসামি গ্রেপ্তার হলে তার স্বীকারোক্তি নিয়ে নাম সংশোধন করা হবে।

নিরপরাধ আসামি মহসিন বলেন, আশুলিয়ার ঘোষবাগে বাড়ির পাশে আমারই এক আত্মীয় সম্পর্কে ফুফা সিরাজ শিশু ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু মামলা বা অভিযোগে আমার নাম ও ভূঁইয়া বাড়ি দেওয়া হয়েছে। যদিও আমি এতে ভীত নই। কারণ আমি নিরপরাধ। তিনি বলেন, তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশকে আরও আন্তরিক হওয়া দরকার। মাঝখান থেকে আমি হায়রানির শিকার হচ্ছি।

এ ব্যাপারে ঘটনার প্রাথমিক তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনার প্রাথমিকভাবে তদন্তে আমি গিয়েছিলাম। ওই নারী যখন এফআইআর দেন তখন তো আমাদের নিয়ে দেননি। তিনি ভুল করতেই পারেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা  ঠিক করে নিবেন। আপনি মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। আবার প্রশ্ন করতে চাইলে, তিনি দেখা করে কথা বলবেন বলে লাইন কেটে দেন।  

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুদ আল মামুন বলেন, আমি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেও প্রথমে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ প্রাথমিক তদন্ত করেছেন এস আই নুরুল ইসলাম। বাদী যে অভিযোগে দিয়েছেন সে অনুযায়ী মামলা হয়েছে। পরে জানতে পেরেছি আসামির নাম ভুল। তবে আদালতে আবেদন করে নাম পরিবর্তন করে প্রকৃত আসামির নাম দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে আশুলিয়ায় থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে খতিয়ে দেখছি। নাম পরিবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মাহিদুল মাহিদ/আরআই